আগামীর নগরভাবনা – মার্থা র্থন | Cities of the Future – Martha Thorne

30 January, 2020 Total View: 21

Illustration by: Reesham Shahab Tirtho

ধারনা করা হচ্ছে আগামী চল্লিশ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্বিগুণে পরিনত হবে যা শহরকে সর্বোপরি এবং টেকসই রূপান্তরের দিকে যেতে বাধ্য করবে। স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে একটি জনবহুল মহানগরীর সক্ষমতা নিয়ে কাজ করা যার উচ্চ আবাসন সক্ষমতা থাকবে এবং অধিবাসীদের জন্য জীবনমানের উন্নত অবস্থার আমন্ত্রন জানাবে। পৃথিবীর মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক এখন শহরে বাস করে যেখানে স্থাপত্যের বড় ভূমিকা হচ্ছে তার ডিজাইন ভাবনাকে কিভাবে সমন্বয় করে শহরে সেবা, পরিবেশ এবং নাগরিক পরিসরের যোগ্যতা নিশ্চিত করা যায় । এ কারনেই কি শহরের রুপান্তর বর্তমানে এত বেশি মনোযোগ পাচ্ছে ? আই. ই. স্কুল অব আকির্টেকচারের ডিন এবং প্রিৎজকার পুরুস্কারের নির্বাহী  পরিচালক মার্থা র্থনের স্বাক্ষাৎকার ভিত্তিক লেখাটির ইষৎ সংক্ষিপ্ত এবং সম্পাদিত ভাবান্তর করেছেন স্থাপতি খালিদ মাহমুদ ।


প্রধান ইস্যু যা ভবিষ্যতে নগরকে সমন্বয় করতে হবে

রাজনীতি ও অর্থনীতির পাশাপাশি  স্থাপত্য ও নগরায়নের প্রেক্ষিতেও শহর এখন গুরুতৃপূর্ন হয়ে উঠেছে। তাছাড়া, দ্রুত জনসংখ্যায় পরিবর্তন শহরের চরিত্রেও দ্রুততর এবং বৃহদাকার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এর কারন হচ্ছে এই বাড়তি চাপ নগরের ফাংশনের উপর প্রভাব ফেলছে। নগরের সরকার ব্যবস্থা এবং জীবনমানকে প্রভাবিত করছে। এমতাবস্থায় আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে এর মধ্যে দিয়েও উদ্ভাবন, সংস্কৃতি ও ভাল থাকার সুযোগ হারিয়ে যাবেনা।

স্থাপত্য এবং অর্থনীতি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এর বাইরেও বড় পরিসরে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিতে হবে এবং নতুন নগর মডেলে সমন্বিতভাবে দেখতে হবে । অসমতা কমানো এবং টেকসই গুন অর্জনে চেস্টা করতে হবে তবে মনে রাখতে হবে চ্যালেঞ্জগুলো নির্ভর করে প্রতিটি শহরের নিজস্বতা এবং উন্নয়নের মাত্রার উপরে । একটি উন্নয়নশীল দেশের পরিস্থিতি যতটা নাটকীয় একটি ইউরোপীয়ান দেশে সে রকম নাও হতে পারে। ভিন্নতা থাকবে জনসংখ্যার বার্ধক্য, বাড়ন্ত উদ্বাস্তু, যুদ্ধ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এমনকি বেকারত্বের ধরনে । ইউরোপের একটি দেশের মুল লক্ষ্য হয়তো বড় বড় শহরে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা যেখানে জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে তরুনরা কাজ খুঁজে পাবে । আবার উন্নয়নশীল দেশের জন্য লক্ষ্যটা নির্ধারিত হবে সকল সামাজিক অবস্থার মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন এবং অন্যান্য সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করা । এসব কিছু শুধু আবাসন পয়েন্ট থেকেই নয় সুশাসন এবং শহর কৌশলের জন্যও দরকারী ।

উদ্ধাবন, সংস্কৃতি এবং ভাল থাকার শহর

আমরা যে চ্যলেঞ্জগুলোর সামনে পড়েছি তার সার কথা হচ্ছে একটি জনবহুল নগরে বাসযোগ্য পরিসরের অভাব । সাধারনভাবে বলা হয় বড় শহরগুলো অনেকবেশি সুসজ্জিত, এবং বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নিয়ে লোভনীয় কিংবা আকর্ষনীয়। নাগরিক সুবিধাদি যেমন সহজগম্যতা, শক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদির সহজলভ্যতা শহরকে মোহমুগ্ধ করে রেখেছে । তবে বিপদ হচ্ছে এই সুবিধার লোভে জনসংখ্যার আধিক্যে যখন এমনকি শহরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে একসময় অচল হয়ে পরে।হাতের নাগালে থাকা সুবিধা, প্রোগাম এবং পরিসরের কারনে শহরে মানবিক দক্ষতা এবং উন্নত জীবন মানের নিশ্চয়তা তৈরী হয়। এবং লক্ষনীয় যে বিভিন্ন মানের আর্থিক এবং শিক্ষা অবস্থানের মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্বাবন এবং নতুন চিন্তার উম্মেষ ঘটে ।

সঠিক স্থাপত্য চর্চা এখানে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে । শহরের মুল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে এটি একটি কার্যকর কৌশল। এই ধারনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে যে স্থাপত্য কেবলই সমৃদ্ধ সময়ে আমাদের ভোগের সহায়ক শক্তি। বরং এটা আমাদের সমাজ এবং মুল্যবোধের প্রতিফলন। একই সাথে স্থাপত্য-সংযোগ একটি শহরকে আরামদায়ক এবং সবার জন্য সহজলভ্য করতে পারে । আমরা স্থাপত্যের সাথে বা স্থাপত্যের মাঝে বাস করি, স্থাপত্য আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগকে আকৃতি দান করে। স্থাপত্যকে বিচার করার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে এর ফ্যাংশনকে বিচার করতে হবে, একটি নির্দিষ্ট পরিসর ও সময়ের পেক্ষাপটে এটি কতটুকু উপযোগী এবং টেকই ধারনা বাস্তবায়নকে কতটুকু এগিয়ে দিতে পারবে। যদি এর অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং টোপোগ্রাফিক বাস্তবতাকে আমলে নেয়া না হয় তাহলে সবার কাছে সমাদৃত প্রকৃত স্থাপত্য চর্চা সম্ভব নয়।

নাগরিক পরিসরের ধারনাটা কিভাবে তৈরী হয়

এটা পরিবর্তিত হয়েছে এবং ধারনা করা যায় এটার রুপান্তর চলতেই থাকবে । বিংশ শতাব্দীতে এমন অনেক শহর তৈরী হয়েছে যেখানে শুধুমাত্র ভবনের কথাই চিন্তা করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে ভবনের চারপাশের প্রকৃতি নিয়ে ভাবার সুযোগ এসেছে, সুযোগ এসেছে নাগরিক পরিসর নিয়ে ভাবার। আজকে আমরা  যখন একটি ভবন তৈরী করি তখন ভবনকে শুধুমাত্র একটি  স্কাল্পচার  ভাবার সুডোগ নেই বরং এটাকে একটি বৃহৎ পরিবেশের সার্বিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখতে হবে। যেখানে মানুষের চলাচল, বাহন, নিরাপত্তা ইত্যাদির মত ইস্মুগুলোকে বিবেচনায় নিতে হয়। একটি ঘনবহুল জনসাধারনের দেশে শহুরে অধিবাসীরা মুক্ত সবুজ বিনোদন পরিসরের খুব অভাব বোধ করে থাকে । বর্তমানে একটি নির্মানন কাজ শুরু করলেই এটাকে রাস্তা, অবকাঠামো, নাগরিক পরিসর এবং ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনের সুবিধা সম্বলিত সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাজিয়ে নিতে হয়। এসবকিছুর সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় একটি শহর গড়ে ওঠে, পরিবর্তনকে সয়ে নেয়। এখানে আরো মনে রাখা যেতে পারে, বিশেষ ভবন এবং মনুমেন্টগুলো আমাদের মনে বিশেষ অনুভূতি বা ভাললাগার অনুভূতি তৈরী করতে পারে, তবে স্থাপত্য সব সময় বিশেষ শ্রেনীর জন্য কাজ করে যাবে এমনুত ভাবার সুযোগ নেই। স্থাপত্য একই সাথে সাধারন মানুষ এবং সুবিধা বঞ্চিত শ্রেনীর জন্য জীবন যাপনের উন্নয়ন, সামজিক অবস্থান এবং টেকসই পরিবেশের জন্য কাজ করবে । যখন আমরা বুঝতে পারবো যে শহরকে আমরা যা ভাবি শহর আসলে তার চেয়েও অনেক বড় কিছু, আরো অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় আড়ালে রয়ে গেছে তখনই কেবল আমরা বৃহৎ পরিসরে শহরকে নিয়ে ভাবার সুযোগ তৈরি করতে পারব।

শহরের পরিবর্তনের চাপ ।

প্রতিটা দেশ এবং আরো বিশেষভাবে প্রতিটা শহরকে আলাদাভাবে বুঝতে হবে যদি আমরা জানতে চাই যে তাদেরকে কি ধরনের চাপ এবং প্রচলনকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যেমন ল্যাটিন আমেরিকায় এটা হয়তো জনসংখা বৃদ্ধির হারজনিত কারনের মতো সহজ ব্যাপার। অপরদিকে অন্য অন্য অনেক শহরে এটা হবে প্রাকৃতিক দূর্যেগি বা যুদ্ধের মতো মনুষ্যসৃস্ট জনগনের স্থানান্তরের কারনে । নিরাপত্তার সন্ধানে মানুষ শহর থেকে আরেক শহরে মানুষ যাতায়াত প্রভাবিত করছে। চীন এর একটি উদাহরন, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে সরকারের নীতি নগরায়নকে তরান্বিত করছে , নতুন নতুন শহরের জন্ম হচ্ছে।

শহরের সাধারন চরিত্রের শেয়ার ।

শহরকে একটি পদ্ধতি বা ইকো পদ্ধতি হিসেবে চিন্তা করা যায়। সব শহরেই শহরবাসীর সংখ্যা, কর্মউপযোগী মানুষের সংখ্যা এবং পরিবহনের পদ্ধতির পাশাপাশি সার্ভিস কোয়ালিটির এনালাইসিস করা সম্ভব৷ তবে সকল গবেষনার একটি সীমাবদ্ধতা আছে। কারন আমাদেরকে শহরের ইতিহাসকেও বিবেচনায় আনতে হয় যা কিনা ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন ধরনের হয় । আমাদের প্রশ্ন করতে হবে কেন শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, খুঁজে বের করতে হবে কেন গ্রাম থেকে এই শহরমুখী স্রোত এবং এই শহরমুখী স্থানান্তর কোথায় গিয়ে শেষ হবে। এই স্থানান্তরে কম বয়সী কিংবা বেশি বয়সী -কাদের অংশ গ্রহন সেই ডেমোগ্রাফী নিয়ে গবেষনা করতে হবে।

এখানে আরেকটি বিষয় আছে যেটা কম গুরুতৃপূর্ন নয়। আমরা অনেক সময়ই হিসেব করি যে শহরের জীবনমান গ্রামের চেয়ে উন্নত। কিন্তু খুব নিবিড় গবেষনায় দেখা গেছে দরিদ্র এবং সম্পদশালীর আর্থিক অবস্থার পার্থক্য বেড়েই চলছে। যদি উপাত্তের দিকে নজর দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে উন্নয়নের আশায় আসা লোকদের অবস্থা বরং দিনে দিনে আরো খারাপ হচ্ছে। এটা খুবই বিপদজনক । যদি আশা করা হয় যে প্রযুক্তি সব সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে এবং শহরকে সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে তাহলে আমরা ভালো কিছু পাবোনা।

শহরের জন্য অনুকরনীয় উদাহরন ।

টেকসই এজেন্ডাকে মাথায় রেখে কিছু শহর শক্তি উৎপাদন করছে, এবং অন্যান্য  শহর যেমন হামবুর্গ  উৎপাদনের চেয়ে পুনরুৎপাদন বেশি করছে। অপরপক্ষে নিউইয়র্ক তার রেলওয়ে অবকাঠামোর একটা অংশকে পুনর্বাসন করছে পার্ক, নাগরিক পরিসর ইত্যাদিতে যা কিনা পরিত্যক্ত হয়েছিলো । এই কার্যক্রম পারিপার্শ্বিক অর্থনীতিকে পুনরিজ্জীবিত করেছে এবং দর্শনার্থীদের জন্য এবং একই সাথে সকল স্তরের মানুষের জন্য বিনোদনের সুযোগ তৈরী করেছে। কলাম্বিয়ার মেডেলিন এমনই আরেকটি চমৎকার উদাহরন। এখানে ইনফরমাল সেটেলমেন্ট এবং নগরের ভয়াবহ অপরাধপ্রবনতা নিরাময়ের জন্য জন-অংশগ্রহনমুলক মডেল কার্যকর করেছে। নতুন উন্নয়নের জন্য তারা গনযোগাযোগ এবং স্তানান্তরযোগ্যতা তৈরীতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কেবল কার এবং ট্রলি বাসের ব্যবস্থা করেছে। একই সাথে নতুন গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা শুরু করেছে। এখানে গ্রন্থাগার মানে শুধু বইয়ের কেন্দ্র নয় বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যা সামাজিক পুনর্জাগরেনের জন্য ডেডিকেশন এবং এলাকার ভবিষ্যতকে প্রকাশ করবে।

এভাবে বিভিন্ন শহরের জন্য বিভিন্ন পথে ভালো ভালো চর্চা শুরু করা যেতে পারে। বিলবাও এর ক্ষেত্রে গগেনহাম মিউজিয়ামের কারনে মানুষের চলাচল বেড়েছে এটা বলা হবে খুবই হালকা ব্যাপার । আসলে নগরের রূপান্তর আরো জটিল জিনিষ । বর্তমান শিল্পবিপ্লবত্তর যুগে বিলাবাও হচ্ছে ভূমি পুনরুদ্ধার-এর একটা উদাহরন। একই সাথে এতি মোহনা সংরক্ষণ এবং ব্যস্ত বন্দরকে সাগরের দিকে  প্রসারিত করবার উদাহরনও বটে। আমার মতে এই ফ্যাক্টরগুলো মিউজিয়াম তৈরীর চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে শহরকে নতুন চেহারা দেবার জন্য।

সাগরের সাথে  অতীত সম্পর্ক এবং জমি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা  বিবেচনায় নেদারল্যান্ড পানি ব্যবস্থাপনার একটা কার্যকর উদাহরন হতে পারে ।লন্ডন শহর অনেক কারণেই সাধারণ হতে পারে তবে বিশেষভাবে একে লক্ষ করা যায় নতুন ভবনে পাকিং সংখ্যাকে সীমিত করার মধ্য দিয়ে। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীরাই কিছু  পরিসরে পার্কিং এর সুযোগ রাখে । সুতরাং শহর তার ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছে। এটা হয়তো আরোপিত কিন্তু উদারনস্বরূপ।

নগরের রূপান্তর নিয়ে আশাবাদ ।

কার্যকর হয়েছে এমন কিছু মডেল এবং উদ্যাগ নিয়ে যদি আমরা অধ্যয়ন করি তাহলে আমরা ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদি হয়ে উঠবো । যদি আশা করা হয় যে প্রযুক্তি সব সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে এবং শহরকে সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে,  অথবা শহরে শুধু তারাই থাকবে যাদের থাকার মতো সামর্থ আছে তাহলে আমরা ভালো কিছু পাবোনা। আমরা সবাই আসলে একই নৌকার আরোহী, যদি একই মতে কাজ করতে পারি তাহলেই সকল কাজের মধ্যে সমন্বয় করতে পারব।

ABOUT THE AUTHOR

ARTICLES BY THE AUTHOR

PEOPLE ALSO VIEW