বসতবাড়ি | অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান
8 September, 2020স্নেহের দাদাভাই,
একদিন জানতে চাইবে কেমন ছিল আমার গ্রামের বাড়ি?
এই চিঠিতে তাই বলছি। অনেক ছোটবেলার কথা। স্কুল ছুটিতে নানার বাড়ি যেতাম আমরা।
শীতের সারা রাত টুপ টুপ করে অনেক গাছের পাতা বেয়ে টিনের চালে কুয়াশার শব্দ পেতাম ঘুমের ভেতরেও। রাত বাড়ত আর কুয়াশা ভারি হয়ে লেপের উপর নেমে এসে বসে থাকত। সেই কুয়াশা নামার ও কেমন যেন মিহি একটা আওয়াজ হতো কানের পর্দার একদম কাছে। হয়তো মনের ভুল। তারপর হঠাৎ কখন যেন বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে লেপের ওপর, মাটির মেঝেতে মিষ্টি মিষ্টি সূর্যের ছিটকে ফোটকা আলো এসে যেত। ঘরের পেছনে পাটখড়ি দিয়ে বানানো রান্নাঘরে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে নানুর পাশে বসতাম। নানু শব্দ করে বাঁশের চোঙ্গায় ফু দিতেন আগুন ঠিক করার জন্য। ধোঁয়া উঠে চুলার উপরে ঝুলানো কালো লাকড়ি পার হয়ে অন্ধকার ছাদের ফাঁক দিয়ে আলোকিত কুয়াশায় মিশতে থাকত।
আমার নানার বাড়ি ছিল কিশোরগাঞ্জের শহরতলীতে চরশোলাকিয়া নামের জায়গায়। এখন এটা শহরের ভেতরে চলে এসেছে। আশির দশকে যখন এখানে এসে প্রথম ঘর করেন তখন আশেপাশে সব ছিল নিচু ধানক্ষেত। সন্ধ্যা হলেই বাঁশবনে আর পাটক্ষেতে শেয়ালের হুক্কাহুয়া । তার মধ্যেখানে খুব সাধারণ বেড়ার ঘর একটা। ব্যবহৃত পুরাণ বাঁকা শাল খুঁটি আর কাঠের খুঁটির উপর টিনের চৌচালা ছাদ,বাশের বেড়ার দেওয়াল এবং মাটির মেঝে। বাঁশের বেড়ার সিলিংএর উপর সুপারি- আলু রাখা হতো। বাসায় মূলত ছিল একটা বড় ঘর- তার ভেতরেই একাধিক খাট, খাওয়ার জায়গা ও অন্যান্য সব। সামনে দুই পাশে ছোট দুটি রুম। সামনের দিকে মূল দরজা আর পেছনের দিকে রান্নাঘরে যাওয়ার দরজা। বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলতে মনে পড়ে যে ঘরটা সব সময় একটু অন্ধকার আর বেশ ঠাণ্ডা থাকতো। বিদ্যুৎ ছিল না কিন্তু সবাই হাতপাখার বাতাসে ঘুমাতে পারতো ।
রান্নাঘরের পেছনে বড় চালতা গাছের ছায়ায় টয়লেটে ছিল এক ভয়ঙ্কর মাকড়সা রাজার আস্তানা। তার পেছনে বাঁশঝাড় আর জঙ্গল । ভূতপ্রেত থাকত সম্ভবত ঐসব জায়গায় । আমি তাই বেশির ভাগ সময় সামনের উঠোনেই থাকতাম- মুরগি আর বেড়ালের কাজকর্ম দেখতাম হা করে।
সন্ধ্যার অন্ধকারে কুপি বাতির আলোয় ঘরের ভেতর বিশাল বিশাল ছায়ার নাচানাচি আর বড়দের কথাবার্তা শুনতাম আবছা আবছা। বাহিরে কোন বৃষ্টির রাতে এক লক্ষ কোলাব্যাঙের ঘুমপাড়ানি গানের তালে একসময় আবার ঘুম।
সেই মাটির মেঝেওয়ালা মায়ার দেশ এখন টাইলসের মেঝে আর অনেক লাইটের আলোয় হারিয়ে গেছে। আচমকা যেন সবটা দেশ ইট দিয়ে বানানো এক বিশাল শ্রীহীন বস্তি হয়ে গেছে। অভাবের সাথে সাথে বিদায় নিয়েছে বনবিড়ালের ডাকও ।
দেশের মানুষের আয়-উন্নয়ন যেমন দরকার আছে, প্রাকৃতিক প্রাচুর্যেরও তেমনি দরকার আছে। তোমরা নিশ্চয়ই একদিন সেইসব প্রাচুর্যের কিছুটা ফিরিয়ে আনবে- এই আশাতেই রইলাম।
ইতি,
তোমার দাদা
আমাদের মনের ভেতর ছাড়া আর কোথাও বেঁচে নেই সেই সবুজ দেশ।
একটা বৃষ্টির দিনে বা গভীর শব্দহীন রাতে আপনার উত্তরসূরির জন্য তাই চিঠিতে লিখে ফেলুন কেমন ছিল আমাদের পুরনো দিনের বাড়িঘর, উঠান, মাঠ, বাগান, পুকুর, আমগাছ, নদী, সাগর, মাছ এবং হাওর, বাংলাঘর, বাঘডাশ, খড়ের গাদা, শেয়াল, জঙ্গল, পাহাড়, ঝিরি ইত্যাদি।
[৫০০ শব্দের ভেতর- A4 কাগজ, সিঙ্গেল স্পেসিং, ফন্ট সাইজ ১১] আপনার কাল্পনিক বংশধরকে (নাতী) উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখে পাঠান আমাদেরকে ( বাংলা এবং যদি সম্ভব হয় ইংরেজি অনুবাদ) ।
সাথে আপনার সেই বাড়ির সাধারণ তথ্য (যেমনঃ আপনার নাম, পেশা, বয়স, এলাকার নাম, আপনার পূর্বপুরুষদের তথ্য, এথনিসিটি, নির্মাণকাল, ভেঙ্গে ফেলার সময় ইত্যাদি ……) ,পুরাতন বা বর্তমান ছবি (যদি থাকে) এবং খুব সহজ একটি নকশা অবশ্যই পাঠাবেন আঁকিয়েদের বোঝার সুবিধার জন্য।
যদি পরিবারের বয়স্করা কেও বলতে চান, চিঠির সাথে ভয়েস রেকর্ড ও পাঠাতে পারেন।
আমরা কিছু আঁকিয়ে ও স্থপতি সেইসব চিঠির উপর ভিত্তি করে আঁকবো ছবি এবং নির্বাচিত চিঠির সাথে ধারাবাহিকভাবে http://localhost/context/ এ এবং পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশিত হবে সেইসব।
চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
আরো জানতে:
কর্মী বাহিনী: সাবা ইসলাম , স্থপতি মোঃ রায়হানুল হাই , স্থপতি শেখ রিসাদ আহম্মদ , স্থপতি সাদ বিন মোস্তফা, স্থপতি রীশাম শাহাব তীর্থ এবং স্থপতি সায়মুম কবীর ।
বাড়ির নকশা এবং চিঠির অনুলিপি :
EVENT BY CONTEXT
Organizer:
Featuring:
Organizer:
Featuring:
Organizer:
Featuring: