বসতবাড়ি | চিঠি ২ | স্বর্ণকুটির

15 November, 2020 Total View: 49

Ancestral home of Anupriya Sarkar | Visualization by Reesham Shahab Tirtho © CONTEXT

মূল চিঠি (সম্পাদিত):

প্রিয় উত্তরাধিকারী,

আজ তোমাদেরকে “স্বর্ণকুটির” এর কথা বলব।

আমার দাদু জিতেন্দ্রকুমার দে আর তার ভাই মনোরঞ্জন দে ১৯৪৭ সালের আগেই আসানসোলে আসেন। শিল্পনগর বার্নপুরের শহরতলীতে উনারা বসতি গাড়েন।

ইংরেজি ইউ এর মত নকশায় তৈরি বাসা। সদর দরজার ভেতরে পা বাড়ালেই পাবে উঠোন। মূল ঘর মাটি থেকে খানিকটা উঁচু করা। উঠোন থেকে সেই ঘরে যাওয়ার জন্য ছিল সিঁড়ি।

বাড়ির ছাদ কিন্তু বিভিন্ন রকম খুঁটির উপর ভর করে বানানো। যেমন বারান্দার ঘরগুলোর সামনে তিনটি খুঁটি সিমেন্টের আবার রান্নাঘর ও বাথরুমের সামনের খুঁটি দুটো কাঠের। রান্নাঘর আর বাথরুম যদিও পাকা কিন্তু সেটুকুর চাল ছিল টালিতে ছাওয়া। রান্নাঘরের সামনেও একটা সিঁড়ি ছিল যেন উঠোন থেকে সরাসরি রান্নাঘরে চলে যাওয়া যায়। রান্নাঘর আর মূল ঘরের মাঝের জায়গাটুকুর উপরে চাল দেওয়া ছিল যেটা বাড়ির খাবার ঘর হিসাবে ব্যবহার করা হতো।

অনেক আগে, শুরুর ঘরটার পাশে সবসময় একটা আদ্যিকালের বেতের চেয়ার থাকত। টানা বারান্দা দিয়ে পুরো বাড়িটার সবগুলো ঘর যুক্ত ছিল।

আমার দাদু আর বড় দাদু তাঁদের মা স্বর্ণময়ী দেবীর নামে এই বাড়ির নাম রাখেন “স্বর্ণকুটির”।

খাবার ঘর আর রান্নাঘরের মাঝে ছোট একটা দরজা দিয়ে চলে যাওয়া যেত বাগানে। সেই বাগানটা ছিল যেন একদল ঝাঁকড়া গোলাপ ঝাড়ের বিস্ফোরণ। এদের সাথে ছিল একটা আকাশের সমান বড় পেয়ারা গাছ যে বাড়ীটাকে সারা দিনমান ছায়া দিয়ে রাখত। কাঁঠাল, জাম আর কলাগাছও ছিল দেয়ালের ধার ঘেঁষে। বাগানের দেয়ালে ছোট দরজার ওপারে রাস্তা।

আমরা গরমের ছুটি সবসময় দাদুর বাড়িতে কাটাতাম। প্রতি বছর বিশেষ করে বই মেলার সময় আমার দিদা বড় হরলিক্সের বয়াম ভর্তি করে আচার, মুড়ির মোয়া আর পেয়ারা পাঠাতেন।

সদর দরজার ডান পাশে ছিল কুয়ো। আমার এখনও মনে পড়ে সেই কুয়োর ভেতরে একশো বছরের বুড়ো মাগুর মাছকে। আমার দাদুর বাবাও এই বাড়িতেই একশোর বেশি বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আমার মা বলতেন “এই বাড়িটা কত কিছুরই না সাক্ষী।“ বাড়িটা সবসময় মানুষে গমগম করত। দাদুরা খুবই অমায়িক মানুষ ছিলেন। ওপার বাংলায় আমাদের আত্মীয়, পরিচিতরাও এই বাড়িতে আসতেন নিজের মনে করে। আশি সালের শুরুতে বাড়ির ছেলে মেয়েদের একে একে বিয়ে হতে শুরু হয় আর তারা বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পরতে থাকে (যেমন আমার মা)।

কিন্তু গরমের ছুটিতে আমরা ঠিকই ফেরত আসতাম স্বর্ণকুটিরে। আমার মনে হত মাগুর মাছটারও যেন এই বাড়িটার সমানই বয়স। পেয়ারা গাছটাও যেন আদি থেকে অনন্ত স্নেহভরে মিষ্টি ফল দিয়েই যাচ্ছে।

বাড়ি আর কুয়োটা এখনও কোনভাবে আছে টিকে। কিন্তু প্রাচীন মাগুর মাছটা, পেয়ারা গাছ এবং আমাদের দাদু- দিদা কেউই আর নেই।

ইতি-

তোমার পূর্বের মানুষ

মুল চিঠির লেখিকা-

অনুপ্রিয়া সরকার

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ

ভারত।

Ancestral home of Anupriya Sarkar | Visualization by Reesham Shahab Tirtho © CONTEXT
The ancestral home of Anupriya Sarkar | Visualization by Reesham Shahab Tirtho © CONTEXT

 

Visualization by Saad Ben Mostafa © CONTEXT
Visualization by Saad Ben Mostafa © CONTEXT

 

Based on original drawing provided by the sender. Redrawn by: Md. Raihanul Hai
Based on the original drawing provided by the sender. Redrawn by: Md. Raihanul Hai

 

English version (Extended):

Dear Descendant,

Today I’m going to tell you the story of ‘Swarna Kutir’.

My dadu (grandfather) Jitendra Kumar Dey and his brother Monoranjan Dey, moved to Burnpur, Asansol from village Durgapur, Chittagong, Bangladesh (then East Bengal) way before the 1947s. hailed. He was working in IISCO (The Indian Iron and Steel Company), Asansol. My dida, Reba Sircar, was a Bengali from Kumardhubi, district Dhanbad, Jharkhand, India state of Bihar in India. Because of his job, my dadu and his brother’s family settled in the township of Burnpur and started building the house, while raising their kids.

On the outskirts of an industrial town lies my dadu didar bariSwarna Kutir’- a house my grandfather and his brother built for their families. It is an inverted U- shaped house. When you step inside, you have the traditional ‘uthon‘ or an open courtyard. The house is slightly elevated from the ground and you have a connecting stair to reach the main quarters. The house is supported by pillars- three cemented ones in front of the rooms and two made of wood in front of the kitchen and first bathroom. The kitchen and bathroom though cemented, still have the facade of a thatched/tiled roof. There is also a stair in front of the kitchen, so people can go to the ‘uthon’ directly from the kitchen. The space from the rooms towards the kitchen was covered. It was used as a family dining space. In earlier times, there was a wicker arm-chair next to the first room. There was a ‘tana-barada’ connecting the entire house. My grandfather and his brother named the house after their mother Swarnamoyee Dey.

There was a small door next to the dining space and before the kitchen, leading to the garden. The garden as I remember was a mad jungle of roses. There was a huge guava tree shading the house. Jackfruit, berries, and bananas were on the sidelines. There was a small door that took you out from the garden to the road. I have spent my summer vacations in my dadu didar bari. Every year, especially during book-fair, my dida used to send huge Horlicks jars full of ‘Achar’, ‘Murir moa’ and ‘Peara’ (guava) during its season.

On the right-hand side from the main door, there is the ‘Kuo’ (the family well). I still remember the sole ‘magur mach’ (catfish) in it swimming for centuries. My grandfather’s father Purna Chandra Dey also breathed his last in the house.

It was my mother who told me “the house has seen a lot. It was always full of people. No relatives, friends have ever turned away. Your grandfather was very generous. All his relatives, acquaintances from ‘opar bangla’ knew this house and was always welcome when they came over.” At one point both the brothers lived with four kids each. I have never seen my grandparents sit and live life lavishly or crib about anything, they have always been up about and busy from dawn to dusk. From the 80s the daughters started getting married and moved to their houses in different cities (my mother).

But we visited Swarna Kuthir during our summer vacation. I have always seen the magur mach (catfish) in the well. I always got the feeling that the ‘mach‘ was as old as the house. The guava tree was another permanent fixture of the house. Always bearing very tasty fruits.

The house is still there, so is the ‘Kuo‘, but the magur mach, peara gach and my dadu dida are no more…

With love,

Your Ancestor

Sender:

Anupriya Sarkar

Kolkata, West Bengal,

India

 


হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের শেকড়। গ্রামের বাড়ি আজ যেন এক নস্টালজিয়া। শুধু বেঁচে আছে আমাদের স্মৃতিতে। কি রেখে যাচ্ছি আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে? সেই শিকড়ের খোঁজে আমরা খোলা চিঠির আহ্বান জানিয়েছিলাম।

আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।

বিস্তারিতঃ http://localhost/context/events/event/basatbari/

ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com


Disclaimer:

CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website.

PEOPLE ALSO VIEW