বসতবাড়ি | চিঠি ৬ | ঐতিহাসিক বাংলো বাড়ি

19 January, 2021 Total View: 34

Ancestral home of Sadia Ishtiaque | Visualization and inking by Nowshin Matin & colouring by Kazi Fariha Tasnim © CONTEXT

মূল চিঠি:

স্নেহের দাদাভাই,

আজ আমি তোমাকে আমার দাদাবাড়িতে থাকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই।  এই বাড়িকে ঘিরে আনন্দে ভরা স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়ে গ্রথিত আছে।  চলো সেই স্মৃতির গহব্বরে আমরা হারিয়ে যাই। 

আমাদের বাসা ছিল সিলেটের শেখঘাটে।  ১৯৫০ খ্রীস্টাব্দে বাসাটা তৈরি, যা এখনো মজবুত  ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে।  জন্মের পর থেকেই এই বাসায় আমার জীবনকাল অতিবাহিত হয়েছে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। আমাদের বাসাটা ছিল চারিদিকে গাছ দিয়ে ঘেরা, আমার বাবা বাগান পছন্দ করতো। বাসার সামনে একটি ছোট বাগান ছিল যেখানে বাবা আর আমি প্রতি বছর অনেক সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ লাগিয়েছিলাম। আমাদের বড় বড় ফলের গাছ যেমন আম, কামরাঙ্গা, বড়ই , কাঁঠাল, নারিকেল, পেয়ারা, জাম্বুরা, লিচু ছিল।  বাবা আর আমার ছোট ভাই গাছে উঠে ফল পারতো। আমার এখনো মনে পরে যে, একবার এতো ফলন হলো যে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আর প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করার পরেও অনেক উদ্বৃত্ত ছিল। গাছের ফল (আম, বড়ই) দিয়ে আমরা আচার বানাতাম আর সারা বছর খেতাম। গাছ থেকে পেড়ে ফল খাওয়ার মধুর সময় গুলো আমার স্মৃতিতে এখনো জ্বলজ্বল করছে। 

একতলার বাসাটা ছিল সিলেটি ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহনকারী। সেখানে ছিল চারটি শোয়ার ঘর, একটি বসার ঘর, একটি খাবার ঘর, দুইটি  ষ্টোর রুম, একটি রান্নাঘর আর বাথরুম।  আগে বাথরুম বাইরে ছিল যা এখন পরিত্যক্ত।  ঘরের বাইরে ছিল বারান্দা; আমি ওই বারান্দায় সাইকেল চালাতাম।  প্রতিটি ঘরে ছিল অনেক জানালা।  দরজা, জানালা,  চৌকাঠ  সবই ছিল কাঠের তৈরি। আমার মা বাসাটা সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর তদারকি করতেন।  প্রতিটি ঘরের উচ্চতা ছিল আধুনিক সময়ের ঘরের  চেয়ে অনেক বেশি।  প্রতিটি ঘরের উচ্চতা ছিল প্রায় ১৮ ফুট। আমার শোয়ার ঘরের উচ্চতা ছিল ১০ ফুট এবং অর্ধ অষ্ট-কোনাকৃতির।  বাসার ছাদটি টিনের এবং ভেন্টিলেটর ছিল ১৬ ফুট উচ্চতায়।  শীতল বাতাসে আমাদের বাসার ভেতরে ছিল আরামদায়ক আবহাওয়া।  সূর্যের আলোক রশ্মি পূর্বে জানালা দিয়ে প্রবেশ করত। সেই সময় আমাদের দিনগুলো ছিল প্রাঞ্জল।  বাসার  মূল কাঠামো থেকে রান্নাঘর ছিল অসম্পূর্ণ আলাদা সেখানে যাবার পথ ছিল টিনে  ঢাকা যা আমাদের সবার জন্য এক অভিনব অভিজ্ঞতা। 

সারা বছর প্রচুর বৃষ্টি হতো;  টিনের চালে এই শব্দ আমাদের জন্য ছিল অদ্ভুত ভালোলাগার এক অনুভূতি। শীতের সময়ে বাইরের উঠানে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলতাম।  বসন্তকালে বাসার চারিদিক  নানা রং-বেরংয়ের ফুলের শোভায় সজ্জিত হতো। 

এই করোনাকালীন সময়ে আমরা সবাই আজ ঘরবন্দী।  আমার শেখঘাটের  বাসাকে আজ  অনেক মনে পড়ে। সেই বাসাতে খোলা হাওয়ায়  আর খোলা উঠানে আমরা আরো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দিনানিপাত করতে পারতাম।

যদি পারতাম আমি আবার ওই বাসায় ফিরে যেতাম আর স্মৃতির ডায়েরি  খুলে সুখের স্মৃতির পাতা উল্টালাম।  সেই বাসা টা যে আছে আমার হৃদয়ের মণিকোঠায়।  জীবনের শেষ অঙ্কে পৌঁছেও, দাদুভাই, সেই সুখের দিনগুলো  আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে। কালের বিবর্তন আর বাস্তবতার তাগিদে বাসাটা ভাঙতে হবে, তুমি তোমার জীবনে সেই বাড়িটি নিজ চোখে দেখতে পারবেনা, শুধু ছবি দেখবে হয়তো  তাই  তোমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা, কিছুটা হলেও যেন বেঁচে থাকে তোমার স্মৃতিকোঠায়।

ইতি

তোমার দাদী

(প্রেরক: সাদিয়া ইসতিয়াক)


1950 সালে সাদিয়া ইশতিয়াকের দাদা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। চাকরির পোস্টিংয়ের কারণে তাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে । সাদিয়ার বাবা-মা দুজনেই চিকিৎসক এবং তিনি তার শৈশবকাল (১৯৯৯-২০১৫) তার দাদা-দাদীর বাড়িতে কাটিয়েছেন। এখন বেশিরভাগ সময় ঘরটি  খালি পরে থাকে।

Visualization by Nowshin Matin © CONTEXT
Based on the original drawing provided by the sender. Redrawn by: Saad Ben Mostafa © CONTEXT
Visualization by Nowshin Matin © CONTEXT
Visualization by Nowshin Matin © CONTEXT

(English Version)

Dearest grandchild,

I’d like to share my stories about my time that I spent in my grandparents’ home. The memories and joy I experienced while I was living there will always have a special place in my heart. Let us get lost in that memory lane.

My house is located in Sylhet in an area known as Sheikghat. The house was built in 1950 and it is still standing strong. I have basically spent all my life there until 2015. Our house was surrounded by trees; my dad loves gardening; we had a small garden in the front where we planted flowers every year. We had large trees like Mango, Jackfruit, Starfruit, Coconut and various other fruits. My dad and my younger brother used to climb trees to pick fruits. I clearly remember that once we had such a harvest that there was a lot of surplus even after it was distributed among relatives, friends and neighbours. We also made pickles from them and ate them for the rest of the year. I really miss eating fresh fruits directly from the trees.

The house consisted of a single storey, it followed traditional architectural style which is common in Sylheti houses. It consisted of 4 bedrooms, 1 living room, 1 dining room, 2 storerooms, kitchen and toilets. There was an outdoor toilet unit which was no longer in use. The rooms were connected with long verandahs on both sides. I learnt riding bicycle in those verandahs. There were a lot of windows. Every door, window panel, frames – everything was made of wood. My mom was always busy looking after the house.

The height of each room was much higher than that of a typical modern house. The height was about 18 feet except for my bedroom, it was 10 feet. However, the plan of my room was half octagonal. The roof was made of CI sheet, and we had ventilators at around 16 feet high. The gentle breeze was just enough to make interiors comfortable. Morning sun used to enter through the east windows. The life was colourful at that time! The Kitchen was a separate block from the main building. The path leading to the kitchen was covered, and the walk from house to kitchen was a different experience.

It rains heavily in Sylhet throughout the year; the sound of raindrops on the roof was mesmerizing. During winter, we would set up badminton nets and have our friends come over to play. In the spring, the front garden filled with vivid and colorful flowers.

As we are locked down at homes during this pandemic, I deeply miss my home at Sylhet. It would have been healthier to spend our quarantine time there. The open spaces, the green vegetation, the cool breeze – all of these would have made this time more bearable.

If I could, I would go back and relive some of these memories. No matter where I go, that house will remain in my heart. No matter how old I become, this place will hold some of the most memorable and cherishing parts of my life.

This house is going to be demolished soon, you will not be able to see it in real life, may be only through photographs. So, this my effort to keep the memory of the house alive through your imagination.

With love,

Your grandmother.

(Sender: Sadia Ishtiaque)


The house was built in 1950 by Sadia Ishtiaq’s grandfather. He was a magistrate. He had to travel to different parts of the country due to his job postings. Sadia’s parents are both doctors and she spent her childhood (1999-2015) at her grandparents’ house. Now most of the time the house remains empty.


হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের শেকড়। গ্রামের বাড়ি আজ যেন এক নস্টালজিয়া। শুধু বেঁচে আছে আমাদের স্মৃতিতে। কি রেখে যাচ্ছি আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে? সেই শিকড়ের খোঁজে আমরা খোলা চিঠির আহ্বান জানিয়েছিলাম।

আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।

বিস্তারিতঃ http://localhost/context/events/event/basatbari/

ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com


Disclaimer:

CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website.

PEOPLE ALSO VIEW