মূল চিঠি:
প্রিয় দাদুভাই/নানাভাই ,
তোমরা কি চিঠি লেখ ? আমাদের সময়তেই অবশ্য চিঠির প্রচলন উঠে গিয়েছিল । আমি আমার দাদুর কাছে ছোটবেলায় একটা কি দুইটা চিঠি লিখেছিলাম । তিনি যখন শহর এ বেড়াতে আসতেন আমি কাগজে চিঠির মতো কি যেন লিখে দিতাম যাতে গ্রামে গিয়েও আমকে মনে থাকে। আজ তোমার জন্য সেই গ্রামের বাড়ি নিয়ে একটি চিঠি লিখছি যেন তুমি শহরের আদলে ক্রমশ্য রূপান্তরিত ইটপাথরের যে “গ্রাম” কে দেখবে তার হারিয়ে যাওয়া সিগ্ধ রুপটিও জানতে পার।
ছোটবেলা থেকে শহরে থাকলেও সারাবছর ধরে অপেক্ষা করে থাকতাম —কখন ছুটি পাব আর যাব গ্রামের সেই স্বপ্নপুরীতে। গ্রামে যাবার পথে বাস যখন শহর পেরিয়ে গ্রাম্য এলাকায় প্রবেশ করত তখনই মনে হত চেনা-জানার সীমানা পেরিয়ে অজানা সেই স্বপ্নের দেশে প্রবেশ করেছি। বাসের পথ শেষ করে নদী পাড় হয়ে তার কল-কল ধ্বনির রেশকে সাথি করে আরো দুইদফা গাড়ি বদল করে বাড়ির কাছাকাছি পৌছাতাম। পথ এখানেই শেষ নয়! আরও বিশ-ত্রিশ মিনিট হাটলে পাব বাড়ির দেখা। কিছুদুর হেটেই বসে পড়তাম, দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত এর পাশে। আর তখনই বুঝতাম এখানে গাছের নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকার ফুসরত নেই, বাতাস এখানে কখনো বইতে ভুলে যায় না। হাটার পুরোটা পথ জুড়ে অফুরান বাতাস আর সবুজ এর সাথে আমাদের সঙ্গী হত ছোট্ট ছোট্ট খাল,বরিশাল এর ভাষায় যাকে বলতাম “ব্যাড়” ।
বাড়ির সীমানা যে কোথা থেকে শুরু তা বলা মুশকিল, আসলে তো পুরো গ্রামটাইতো সবার বাড়ি। “দরজা” নামে একটা জায়গা থাকত প্রত্যেক বাড়িতে যেটাকে হয়ত একরকম বাড়ির শুরু বলা যায়।“দরজা” পেরিয়ে, দুপাশের ছায়া আচ্ছাদিত পথ পেরিয়ে এসে পড়তাম বাড়ির উঠানে। উঠানের সামনে-ডানে তিনটি ঘর, বামে শাক-সবজির মাচা,তার ওপাড়ে পাশের বাড়ির উঠান।নানান রঙ এর টিন আর কাঠের নকশা করা বাড়িটা ছিল আমাদের ।দুই ধাপের মাটির ভিটাটা ছিল একরকম “ডাইনিং রুমের সোফার মত”। বাচ্চা-বড় সবাই এই ভিটার ধাপে বসেই দেখত উঠানের সব কাজকর্ম। কি হত না উঠানে! খেলাধুলা, ছোটাছুটি থেকে শুরু করে ধানমাড়াই এমনকি গরমের দিনে রাতের আড্ডা। বাড়ির ওপাশে রান্নাঘরের সাথে ছিল অন্য একটি উঠান। শীতের দিনে এই উঠানটিই হয়ে যেত রান্নাঘর। চুলার চারদিক ঘিরে সবাই বসে থাকতাম গরম পিঠা কিংবা খেজুরের রসের অপেক্ষায়।এর পাশে ছিল ছোট একটা পুকুর আর তার চারপাশে নানান রকমের গাছ-পেয়াড়া,বেল,সফেদা,লেবু,আম…।
গ্রামে থাকা প্রতিদিনই ছিল ধরা-বাধা নিয়মের বাইরে, ইচ্ছা-খুশিমত থাকার অপার আনন্দে পরিপূর্ণ। শীতকালে যখন চারদিকে কিছু দেখা যেত না সেই ভোরে ফুফাত-চাচাত ভাইবোনদের সাথে গ্রামময় ছুটে বেড়ানো, লুকোচুরি খেলা,গাছের ডাল দিয়ে ক্রিক্রেট খেলা, গা ছমছম রাতের অন্ধকার রাস্তা দিয়ে আব্বু-চাচ্চূর সাথে বাজার থেকে আসা, আম-পাড়া, কলাপাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে বাচার ব্যর্থ চেষ্টা, সাতার কাটতে গিয়ে হাবুডুবু খাওয়া… … … সবই অন্যরকম অনুভুতি! একসময় ছুটি শেষ হতো ,আসত বিদায়ের দিন । গ্রামের মায়াবী আকর্ষণ অন্তহীন নিয়মের বেড়াজালে পরাজিত হত।
দাদুভাই/নানাভাই, তোমাদের সময় এই নিয়মের বেড়াজাল হয়ত আরও কঠিন, তবুও আশা করতে ইচ্ছা হয় এই সিগ্ধ গ্রামের আরেকটি ইট কংক্রিট এর জঞ্জাল এ পরিনত হবার যে সূচনালগ্ন আমি দেখেছি তাকে রুখে তোমরা আবার ফিরিয়ে আনবে সেই সিগ্ধতা,সেই শান্তিময় সুন্দরকে।
ইতি,
তোমার দাদাভাই/নানাভাই,
সাধারণ তথ্য
প্রেরকঃ মোঃ তৌকির হোসেন
পেশা: ছাত্র, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়,স্থাপত্য ডিসিপ্লিন।
বয়স : ২২
এলাকার নাম : বাহাদুরপুর,ঝালকাঠি,বরিশাল।
English version | Translated by Ismat Hossain
Dear Dadubhai/Nanabhai,
Do you have the habit of writing letters? Of course, the habit was already in decline during our times. I remember writing a letter or two to my grandfather in my early years. Every time he would visit us in the city I would hand him a small note scribbled on a piece of paper so that he would have something to remember me by once he returned home. I am writing you this letter today to acquaint you with our village home, so that beyond the town-like machinic form you see today, you can envision an image of its tranquil past.
Even though I grew up in the city, I would spend the entire year waiting for the holidays when we would visit our rural wonderland. Every time the bus would travel beyond the familiar limits of the city, I would feel like I was entering a new and unknown land of dreams. Getting off the bus we crossed a river and had to change transportation twice more before we reached the proximity of our village home. But that was not the end! We had to walk another twenty to thirty minutes before we could actually spot the house from afar. Along the way, I would often stop to sit beside the unending paddy fields that stretched into the horizon. It seemed that the trees were always bustling and restless there and the breeze never ceased to blow even for a moment. In the entire walk towards our home, we would be accompanied by the breeze and the greenery as well an abundance of small canals which were called ‘byar’ in the local dialect.
It was difficult to discern between the thresholds of the houses, the entire village appeared like one extended household. There was, of course, an adjoining element in each house called ‘doroja‘ or door which might be ascertained as the onset of the premises. Beyond the ‘doroja‘ you had to walk between welcoming rows of shade trees to reach the main courtyard of the house. There were three rooms abutting the end of the courtyard and also towards its right, on the left, there was a vegetable garden and beyond that the courtyard of the adjacent house. The household with multicolored tin and wooden decorations was ours. The two-tiered earthen plinth acted like an outdoor sofa. All the family members would sit here and observe the activities in the courtyard. And what a variety of activities they were! Starting from various games and running about to threshing paddy and even late-night chitchats during summer evenings. On the other side of the house, there was the kitchen with its own yard. In the wintertime, the entire yard transformed into an outdoor kitchen. We would then all gather around the open hearth for warm “pitha’s” or fresh date syrup. Beyond the kitchen, there was a small pond surrounded by a variety of trees- guava, wood apples, chikoo, lime, mango, etc.
Each day we spent in the village was fun-filled, easy-going, and bursting with our carefree whims. Running about with our cousins in the vagueness of the misty winter mornings, playing hide and seek, playing cricket with random branches, returning home from the bazaar with my father and uncle through the eerie darkness of the village roads, picking mangoes, our inept attempts to defy the pouring rain by covering our heads with banana leaves, submerging in the water while attempting to swim- these were all remarkable experiences. At one point our holiday would end and it would be time for us to leave. The mystical lure of the village was overturned by the conventional beckoning of our everyday lives.
Dadubhai/Nanabhai, the bounds of your regular routines are probably even more stringent than ours. And yet I cannot but hope in anticipation that you will one day be able to halt the gruesome havoc wreaked by urbanization and revive the tranquility and serene beauty that once existed in our villages.
Sincerely,
Your Dadabhai/Nanabhai
General Information
Sender: Md. Toukir Hossain
Occupation: Student, Khulna University Architecture Discipline
Age: 22
Location: Bahadurpur, Jhalokathi, Barishal
GLOSSARY
Dadubhai: Paternal grandfather (here also referred to in reverse to the grandson)
Nanabhai: Maternal grandfather (here also referred to in reverse to the grandson)
Byar : small canals
Doroja: translated as door, refers to the threshold
Pitha: a variety of rice cakes made from rice flour
হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের শেকড়। গ্রামের বাড়ি আজ যেন এক নস্টালজিয়া। শুধু বেঁচে আছে আমাদের স্মৃতিতে। কি রেখে যাচ্ছি আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে? সেই শিকড়ের খোঁজে আমরা খোলা চিঠির আহ্বান জানিয়েছিলাম।
আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।
বিস্তারিতঃ http://localhost/context/events/event/basatbari/
ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com
Disclaimer:
CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website