বসতবাড়ি | চিঠি ২১ | দক্ষিণ দুয়ারী

28 December, 2021 Total View: 36

Letter by Karabi Datta (করবী দত্ত) | Visualisation by Reesham Shahab Tirtho© CONTEXT

মূল চিঠি:

আমার দিদিভাই,

তেরদাগ থেকে হরিনেরশিং আমার দূরত্ব, সইলুকুপা (শৈলকুপা) খুলনা বিভাগ। তেরদাগ পেরিয়ে  নামবে; দক্ষিণ দুয়ার দরজা ধরে ঢুকবে বাড়ির উঠানে । শুনতে পাবে পানের বাটার আওয়াজ। হেঁটে যেও সন্ধ্যামালতির পথ ধরে। দেখবে মাধবিলতা আঁকড়ে রেখেছে আমার বাড়ির  কার্নিশ। কমলা জবা,স্থলপদ্ম,কল্কিজবা,নয়নতারা পেয়ে  যাবে সামনেই। বাম এ পাবে পুকুর, দুইদিকে ঘর, উত্তরে মন্দির আর সাথেই কুমার নদী। আমার বাড়ি সূর্য উঠে অর্জুন গাছের পিছনে,অর্জুন-এর ফল কামরাঙা এর মত সবুজ দাগকাটা। হাতের তালুর মত বিস্তীর্ণ উঠান, গ্রীষ্মকালে তাতে আলু এবং চালের পাপর; বৃষ্টিতে ব্যাঙের থপথপ শব্দ আর মাটির সোঁদা গন্ধ; শীতকালে মা কুকুরটা তার তিন ছানা নিয়ে রোদ পোহায় ।

উঠান  থেকে বটের ঝুরির মত উঠে গেছে ঘরগুলোর চার ফিট সিঁড়ি। আমার মুখের মানচিত্রের মত ফেটে গেছে “শানগুলো”। কাঠের মোটা হাকয়ালা দরজা ছিটকানি দেয়া; দেয়ালগুলো  মোটা ইস্পাতের চাট দেয়া ঢালাই করা, যার ফাঁকে শিশু বট গাছ বেড়ে উঠেছে। আর বারান্দার রোদে রাখা আচারের বোতল সামলে রাখে বছর আশির এক বৃদ্ধা  ১২ জোড়া উড়ন্ত কবুতর থেকে। ঘরে দেখবে আলকাতরা মাখা পালঙ্ক, কিম্বা আকাশি রঙ করা মরিচা পরা জানালার শিক। কাচের বয়ামে কত শত আচার, অথবা মেলা থেকে কোন শিশুর কেনা শুকনো খাবার- হাতি, ঘোড়া, মাছের আকৃতির চিনির মিছরি আর বাতাসা।

অর্জুন গাছের পিছনে ১৫শতকের  মন্দির। ১৯৬৯ এ বাড়িটি কেনার সময় মন্দির এর জায়গা দান করা হয়; মূলত  মন্দির আর বাড়িটি সহদর।  লুট  হয়ে যাওয়া মন্দিরের দুপাশের একতলা কাঠামো ছাড়া অবশিষ্ট নেই তেমন কিছু। এই নাট মন্দির শিশুদের খেলার জায়গা, সারাবছর মূর্তি তৈরি হয় এখানে। মন্দিরের চার থামে বাধা রয়েছে  এই বাড়ির শিশুদের শৈশবের  স্মৃতি।

মুল ফটকের বাম-এ পুকুর; গ্রীস্মকালে পুকুরের জলে ঝড়ে পরে পাকা আম। পুকুরভরতি মোটামাথার বিশাল কাতল আর রুই মাছ, যার  পাড়ে গর্ত করে বাসা করে নীল মাছরাঙ্গা ।

পশ্চিমে মাটির রান্নাঘর, সাথে বড় বাগান — কি নেই তাতে? আম গাছ, বেল গাছ,কিম্বা বাতাবি লেবু ও লিচু গাছ;  পেঁপে গাছে কানাকুয়ো পাখি কিম্বা নারকেল গাছ বেয়ে উঠা লাল পিঁপড়ার দল। রাতে এই বাগানে মেলা বসতো পেঁচা, বাদুর ও হাজার হাজার জোনাকির। জঙ্গল ঘিরে নদী, কোন এক বাবা কাঁধে করে মেয়েকে তুলে দেয় কছুরিপানার ফুল; জঙ্গল  তাকে গল্প শোনায় – তুলোর বুড়ি কিম্বা সোনার শিঙওয়ালা হরিণের গল্প ।

দিদিভাই,তোমার জন্য লাল মলাটের তেল চিটচিটে খাতায় আমার এই লেখা। ২০০৩ এ নষ্ট হয়ে গেছে এই বাড়ির প্রায় সবই।  জ্বলে যাওয়া কাল কালির অক্ষরে পেয়ে যাবে আমার বাড়ি। ভরদুপুরে তোমাকে স্বাগতম। তুমি লাল মলাট সরিয়ে পা রেখো আমার বাড়ির উঠানে।

ইতি,

দিদিমণি

নাম: করবী দত্ত

পেশা: ছাত্রী (পরিসংখ্যান, PUST) (২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার)

ঠিকানা: শৈলকুপা

নির্মাণ কাল:  ১৯৬৯

Plan render-Samiya Hoque Monisha and labelling-Saad Ben Mostafa © CONTEXT

Visualisation by Reesham Shahab Tirtho© CONTEXT

Visualisation by Yafiz Siddiqui © CONTEXT

Visualisation by Samiya Hoque Monisha© CONTEXT

 

English version | Translated by Labiba Nazeen

 

Dear didibhai,

My distance is from Terodag to Harinershing, Shailikupa Khulna division. Upon crossing Terodag, through the south door, you will enter the house’s yard. You will be able to hear the sound of betel boxes. As you walk along the path of Shandhyamalati flowers, you will be able to see Madhabilata plants covering the cornice of my house. Orange hibiscus, Cotton rose, Kalkijaba, Nayantara flowers can be spotted nearby. On the left, you’ll see a pond, with houses on both sides, a temple on the North and Kumar river alongside. The sun rises behind the Arjun tree, the fruit of which has a similar green texture like star fruit. The courtyard is vast like the palm of the hand, where, during summer, you’ll see potato wafers and rice wafers; during monsoon, frogs jump amidst the earthy smell of the soil; during winter, the dog sunbathes with its 3 puppies.

From the yard, rises the four feet stairs to the houses. The cracks on the surface are like the wrinkles on my face. Thick wooden doors have locks; the walls are lined with thick steel, in the gaps of which grow small banyan trees. An eighty-year-old woman guards pickle jars on the verandah, from 12 pairs of flying pigeons. Inside the house, you will see tarred beds, or blue painted rusty window grills. There are hundreds of glass jars containing pickles, or sugar puff with shapes of elephant, horse or fish brought by some child from the fair.

Beyond the Arjun tree, stands the 15 Century temple. In 1969, when the house was bought the land for the temple was donated; the temple was part and parcel of the house. There is nothing left but the one-storey structure on both sides of the looted temple. This Nat Temple is a children’s playground, where idols are made all year round. The four pillars of the temple are the testimony of the children’s childhood memories.

To the left of the main gate is the pond, where ripe mangoes fall during summer. The pond is filled with large Katal, Ruhi fish, with blue kingfishers making holes in the bank.

To the west, is the kitchen made of mud, with a large garden next to it — what’s not in this garden? The Kanakuyo bird can be seen eating papaya, the red ants climbing the coconut trees, large mango tree, wood apple tree, limetree, or the litchi tree. Owls, bats, or thousands of fireflies’ chirp at the garden at night. The river surrounds the forest, where a father picks water hyacinth for his daughter. The forest reads out fairytale stories of ‘tulor buri’ orshonar horin’ to her.

Didibhai, this is my greasy red cover notebook, written for you. In 2003, almost everything of it has almost ruined. You will find my house in the letters written in burnt black ink. You are welcome at mid-day. Remove the red cover and step in my house’s yard.

Your didimoni

 

Name: Karabi Datta

Profession: Student (Statistics, PUST) (2nd year 2nd semester)

Address:Sailukupa

Construction period:1969


হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের শেকড়। গ্রামের বাড়ি আজ যেন এক নস্টালজিয়া। শুধু বেঁচে আছে আমাদের স্মৃতিতে। কি রেখে যাচ্ছি আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে? সেই শিকড়ের খোঁজে আমরা খোলা চিঠির আহ্বান জানিয়েছিলাম।

আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।

বিস্তারিতঃ http://localhost/context/events/event/basatbari/

ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com


Disclaimer:

CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website

PEOPLE ALSO VIEW