বসতবাড়ি | চিঠি ২৩ | চর বসতি

8 August, 2022 Total View: 50

Letter by Md Mazharul Islam (Shawon) | Line art- Md Mazharul Islam (Shawon) & coloring- Rafid Rahim © CONTEXT

মূল চিঠি:

প্রিয় দাদুভাই,

আজকে একটি বিশেষ বিষয়ে লিখতে বসেছি তোমাকে; আমার দাদুবাড়ি সম্পর্কে লিখব আজ।

আমার দাদুবাড়ি চরাঞ্চলে, টিকারাকান্দি চর। জামালপুর সদরের ভিতরে হলেও এখানে অনেক দিন যাতায়াত ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিল না। আমরা ছোট বেলায় জামালপুর থেকে প্রথমে টেম্পুতে তারপর ডিঙ্গি নৌকায় গাঙ পার হয়ে তারপর বেশ কয়েক মাইল হেঁটে বাড়িতে গিয়ে উঠতাম। দুর থেকেই বিস্তৃর্ণ ধান ক্ষেতের উপর দিয়ে দুরে বাড়ির বাইটেগ/ বাইড়েক এর বড় শিমুল গাছটা দেখার জন্য উৎসুক তাকিয়ে থাকতাম। টিকারাকান্দি বাজারের পাশেই পুরাতন ভোটঘরের পিছনে মসজিদের সামনেই দাদার কবর, তারপর একটু আমগাছের ছায়া ঘেরা জমি যেখানে মৌসুমী সবজির চাষ হত। এরপরেই বাড়ির বাইটেগ/ বাইড়েক – সেই শিমুল গাছ, একটা বিশাল বাঁকানো ভুতের মত কাঁঠাল গাছ আর ছিল গাছ ভর্তি ঢাসা কামরাঙ্গা । ভোর রাতে এই গাছ থেকে বাদুড় কামরাঙ্গা খেয়ে টিনের চালে ফেলত আর আমারা ভয়ে জেগে উঠতাম।

দাদুবড়িতে একটা উঠানের পশ্চিমে আর দক্ষিনে থাকার ঘর, পূবে রান্নাঘর আর উত্তরে গোয়াল। রান্নাঘরের পিছনে বাঁশ ঝাড়, আর কয়েকটা ইয়া লম্বা জিনের মত নারিকেল গাছের আড়ার নিচ দিয়ে টিনের টয়লেটে যেতে হত। রান্নাঘরের দক্ষিনে কলাগাছ তলায় টিউবওয়েল পাড়ের তিনদিকে শুকনা কলাপাতার বেড়া দেয়া।

পশ্চিমের চৌচালা ঘরটা বাড়ির মূল ঘর, লম্বাটে ঘরটায় মাঝখানে একটা উগার দিয়ে দুইটা কামরা বানানো হয়েছে। একদম ছোট ছিলাম আমরা তখন এই ঘরটাতে শোলার বেড়া ছিল, পরে অবশ্য টিনের বেড়া দেয়া হয়েছিল। দোচালা ছনের চালের রান্নাঘরের বেড়া কিন্তু শোলার (পাটখড়ি)ই ছিল অনেকদিন।

দক্ষিনের ঘরটা পরে তোলা এটাতেও টিনের চাল, টিনের বেড়া। এই ঘরের দক্ষিনে সীমানা বরাবর ছিল কাঁঠাল আর সাজনে গাছের সারি।

দাদুদের উঠানের সাথে গোয়াল ঘরের পাশ দিয়ে লাগানো আরও ছয় সাত ঘরের উঠান নিয়ে ছিল আমাদের শরিক। কোন বন্ধে যখন বাড়িতে একত্রিত হতাম আমরা সব চাচাতো ফুফাতো ভাই বোনেরা সারাদিন এই লম্বা উঠানে ছুটে বেড়াতাম।

বর্ষাকালে বাজারের পাশের খালটা আর সব ফসলের জমি গুলো পানিতে এক বিশাল সমুদ্রের মত হয়ে যেত। শুধু পাট গাছ গুলো মাথা উঁচু করে থাকতো। সারাদিন গামার গুটার খেলনা গাড়ি নিয়ে দৌড়ে, বন্যার পানিতে ঝাঁপিয়ে আর বাজারের বড় জাম গাছতলায় জাম কুড়িয়ে ক্লান্ত চোখে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে আর ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যেতাম যে কালকে ভোরে আবার কবুতর গুলোর বাক-বাকুম শুনে ঘুম থেকে উঠে আর কি কি দস্যিপনা করা যায়।

গ্রীষ্মের ছুটির দিন গুলো ছিল আরও অন্যরকম। গরমে ঘরে থাকা যেত না দেখে খালের পাড়ে বাঁশের মাচা করে সেখানে ছেলেদের আড্ডা বসতো। মেয়েরা বাইটেগে ধান শুকাতে দিয়ে ঘরের ছায়ায় পাটি পেতে বসে পাখি আর মুরগি তাড়াতো। আর আমরা ছোটরা ঘুরে ঘুরে খোঁজ করতাম কোন গাছে উঠে টক আম খাওয়া যায়, কোন আড়ার ফেনের ডাটা, টক তেঁতুল আর কার বাড়ির কাঁঠালের মুছি দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া যায়। আর হঠাৎ কাল বৈশাখী ঝড় আসলে ছেলে বুড়ো সব দৌড়ে চলে আসত ধান‌ ঘরে তুলতে। সে এক বিশাল উৎসব, ঝড় উৎসব।

দাদুভাই আমার, তোমাকে যদি একবার ঐ সময়টাতে নিয়ে যেতে পারতাম!

 

ইতি,

তোমার দাদুভাই

মো: মাজহারুল ইসলাম (শাওন)

Plan render-Musarrat Salsabil Chowdhury and labelling-Saad Ben Mostafa © CONTEXT

Visualisation by Md Mazharul Islam (Shawon) © CONTEXT

 

[ সাধারণ তথ্যঃ

গ্রামের অবস্থানঃ টিকারাকান্দি চর, জামালপুর সদর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

দাদার পরিচয়ঃ আমার দাদা ছিলেন পেশায় একজন কৃষক। আমার দাদার বিশাল পরিবার ছিল- দুই দাদী, সাত ছেল, ছয় মেয়ে নিয়ে।দাদী, দুই চাচা আর দুই ফুফু বাড়িতে থাকতেন। বাকিরা পেশাগত কারনে গ্রামে থাকতে পারেতন না। সাধারনত ঈদে প্রায় সবাই ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়িতে একত্রিত হতো।

গাঙঃ ব্রাহ্মাপুত্র নদ।

বাইটেগ/ বাইড়েক :  মূল ঘর থেকে রাস্তার দিকে ছাড়া জায়গা, উঠানের মত ধান সিদ্ধ করা, শুকনো বা এই জাতীয় কাজের জন্য এই জায়গা সমতল করে, পরিষ্কার করে রাখা হয়।

উগারঃ ঘরের ভিতরে বাঁশের তৈরি একধরনের মাচা এর পাশ দিয়েও কারুকার্য করা বাঁশের বেড়া দেয়া থাকে। মাটির মেঝের আর্দ্রতা থেকে ধান-চাল রক্ষার্থে মাটি থেকে প্রায় দুই ফুট উঁচুতে উগার এর উপর বাঁশের বা মাটির বড় পাত্রে বা গোলা তে সংরক্ষণ করা হয়।

আড়াঃ বাড়ির পিছের দিকে বাঁশ ঝার, কলা গাছ সহ আরো ঝোঁপ ঝাড় ঘেরা অনাবাদি জায়গা। যেদিকে সাধারনত বাড়ির গোসলখনা আর টয়লেট ও বানানো হয়। ]

Visualisation by Md Mazharul Islam (Shawon) © CONTEXT

English version | Translated by Nowshin Matin.

Dearest one,

I write today about something very special; it is about my ancestral home.

My ancestral home is located in Tikarakandi Char. Even though it is located inside Jamalpur town, the transportation system wasn’t really developed back then. When we were kids, we used to take a tempo from Jamalpur, then cross the Brahmaputra River on a dinghy (small boat) and finally walk a few miles to get home. From far, over the vast paddy field, I would curiously look for the large shimul tree in the front yard of the house. Next to Tikarakandi Bazaar is the old polling station, behind which is the mosque where my grandfather’s grave is. Nearby was a piece of land shaded by the mango tree where seasonal vegetables were grown. In the front yard of the house, there was the shimul tree, a huge swirling ghost-like jackfruit tree, and a star fruit tree full of juicy fruits. Near dawn, bats would eat star fruits from this tree and throw them on the tin roof, and we would jump off the bed.

The living quarters are on the west and south sides of the courtyard; there is a kitchen on the east and a barn on the north. Behind the kitchen, there was a bamboo grove with some giant coconut trees. One would pass under them to get to the tin-built toilet shed. To the south of the kitchen, under the banana tree, a fence made of dried banana leaves was built around three sides of the tube well.

The chauchala room on the west side is the main part of the house. The elongated room was made into two parts with a partition in the middle. When we were very young, the room had a  jute sticks-made partition which was later upgraded to a tin-built fence.

The southern part too was later rebuilt with a tin roof and walls. Along the southern boundary of this house were jackfruit and sajna trees.

Next to the barn, beside the yard, there were six or seven more houses where the extended family members used to live.  When we would gather during the holidays, all of us cousins would run around this long yard all day.

During the rainy season, a vast area including the canal next to the market and all the crop fields would become flooded. Only the jute trees kept their heads high. All day long, I would run around in a toy car. Jumping into the flood waters and picking up berries under the large berry trees in the market, I would eventually tire out. I would go to sleep listening to the sound of rain on the tin roof and wake up the next morning to the cooing sound of pigeons and wondering what else to do.

The summer holidays would be another kind of fun. As no one could stay at home in the heat, all the boys would hang out under the bamboo shed on the bank of the canal. The girls used to dry the paddy in the front yard, then sit under the shade, and chase away birds and chickens. And, we younglings would search for trees, with pickled mangoes, to climb. We would look around for houses with jackfruit to stuff with pickle tamarind. And suddenly, when nor’westers thunderstorm hit,  all the boys and old men would come in hurry to collect the harvest. It used to be a great festival, a festival of the storm.

Dearest little one, if only I could take you to that time once!

Love,

Your grandfather,

Md Mazharul Islam (Shawon)


Disclaimer:

CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website

PEOPLE ALSO VIEW