বসতবাড়ি | চিঠি ১ | ষোল ঘরের কাঠের বাড়ি

1 November, 2020 Total View: 121

Village home of Shahed Hossain | Visualization by Reesham Shahab Tirtho and Saad Ben Mostafa © CONTEXT

মূল চিঠি:

আদরের নানুভাই,

আজ তোমাকে এক সুন্দর গ্রামের গল্প শোনাব। আমার গ্রাম , গ্রামের বাড়ি, পরিবেশ, প্রকৃতি সবকিছুর গল্প। আমার গ্রামের বাড়ি  ‘নৈকাঠি’ । ঝালকাঠির ছোট্ট শহর থেকে তিন মাইল দূরে আমার গ্রাম। জীবনানন্দের ‘ধানসিঁড়ি’ ‘সুগন্ধা’ নদী দিয়ে ছিল আমাদের যাতায়াত। নৈকাঠি এক ছায়াসুনিবিড় খালের পাশেই আমাদের বিশাল কাঠের বাড়ি। ছোট বড় সব মিলিয়ে ষোল রুমের দোতলা বাড়ি। আমাদের একান্নবর্তি বড় পরিবারের স্থান সংকুলানের জন্যই হয়তো এমন বড়  বাড়ির পত্তন। অজস্র নারকেল, সুপারি, বাতাবিলেবু, লেবু, আমড়া, দেশীগাব, বিলেতিগাব, চালতা, আতা এমনকি তেজপাতা আর দারুচিনি গাছও ছিল। আর একটা স্বগীর্য় জিনিস ছিল আমাদের বাড়িতে; তাহলো আমার চাচার বসরাই গোলাপ বাগান। অজস্র গোলাপি রংয়ের গোলাপ আর তার সুবাস। সারাবাড়িটা সেই গোলাপের গন্ধে আমোদিত থাকতো। বাড়িতে ছিল গৃহপালিত প্রাণী। যেমন হাঁস, মুরগি, কবুতর আর দুধেল গাই।বাড়িতে ছিল দুটি পুষ্করিণী। একটা ভিতর বাড়িতে আর একটা কাছারি ঘরের পাশে। কাছারি ঘরছিল মূল বাড়ি সংলগ্ন। অতিথিদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সেখানেই।

আমাদের বাড়ির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর মেঝে। মেঝে ছিল সিমেন্ট রেডঅক্সাইড মেশানো ঝকঝকে। ফ্লোর সাড়ে তিন ফুট উঁচু ইট সিমেন্ট এর ভিটার উপর। দোতলায় ছিল কাঠের সুনির্মিত পাটাতন আর উপরে টিনের চালা।দোতলায় সামনে পিছনে নক্সা করা সুন্দর ব্যালকনি। বর্তমান ডুপ্লেক্স কায়দায় ডাইনিং স্পেসের পাশ দিয়ে রেলিং ঘেরা দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। রান্নাঘর ছিল মূল বাড়ি থেকে পাঁচ ফুট দূরে আলাদা চালার নিচে। এই রান্না ঘর ঘেঁষেই ছিল শুকনো কাঠ রাখার আর একটা ঘর। এছাড়াও রান্নাঘরের পাশেই আর একটা রান্নাঘর জায়গা, যা ছিল খোলা আকাশের নীচে। এটা ছিল শীতকালীন ব্যাবস্থা। শীতকালে যাবতীয় রান্না, পিঠেপুলি সব এই রান্নাঘরেই। এর পাশেই ছিল একটা ঢেঁকিঘর, যেখানে চালের গুরা, ধানভানা এসব কাজ হতো।

রান্নাঘরের লগোয়া ছিল ভিতরের পুষ্করিণী। এটা ছিল বাড়ির মেয়েদের জন্য। এছাড়া মূল ঘরের লাগোয়া ছিল শৌচাগার আর গোসলের ঘর। বাইরের পুষ্করিণীটি ছিল কাছারিঘরের কাছেই। অনতিদূরে ছিল হাঁস, মুরগি আর গোয়ালঘর আর কবুতরের ঘর। বাড়ির সামনে সিঁড়ির দুপাশে ছিল পুকুরের ঘাটের মতো বেশ বড় আয়তনের সিমেন্ট বাঁধানো বসার জায়গা। তারপর সামনেই গোবরে লেপা বিশাল উঠোন। বিকেল বেলা জ্যোতস্নারাতে প্রতিবেশীদের সাথে এমনকি দূর থেকে আসা গ্রামবাসীদের অনেকেই আসতো তাদের সুখ দুঃখের কথা নিয়ে নির্ভেজাল আড্ডার লোভে। আর এক অনুসংগ ছিল গুড়ের চা। বাড়ির সেই বিশাল উঠোন ছিল আমাদের খেলার জায়গা। ধান, ডাল, মরিচ, নানা শস্য শুকানোর জায়গা। উঠোনের এক প্রান্তে ছিল পানীয় জলের টিউবওয়েল। প্রতিবেশীদের জন্যও যা ছিল অবারিত।

বাড়ির একটু দূরেই ছিল পারিবারিক কবর স্থান, মসজিদ আর মসজিদ সংলগ্ন পুষ্করিণী। অজস্র গাছপালা ঘেরা বাড়িটাকে কেমন যেন ছায়াসুনিবিড় মনে হতো। অজস্র পাখির কলকাকলিতে সদা মুখর। ঋতু বৈচিত্র্য গ্রামের বাড়িতে যতটা অনুভব করা যায় তেমন আর কোথাও না। বৃষ্টির দিনে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ, শরতের নির্মেঘ আকাশে অজস্র উজ্জ্বলতারা, যা শহরে কখনোই এমন করে চোখে পড়েনা। আর শীতে কেমন জড়োসড়ো অবস্থা।গ্রামের শীত শহরের থেকেও আরো বেশি অনুভূত হয়। বাড়ির পাশের খালে জোয়ারের সময় নৌকা চলতো আবার ভাঁটার সময় খুব ক্ষীণস্রোতা। খালে পুকুরে মাছধরা, সাঁতার কাটা এইসব স্বগীর্য় আনন্দ থেকে তোমরা আজ বঞ্চিত ।বাড়ির কাছের খাল, খালের উপর সাঁকো । খালের পাশে ‘পাইতরা’ গাছ, যা দিয়ে শীতল পাটি বোনাহয়। বাঁশঝাড় আর কতো নাম না জানা গাছের ঝোঁপ। এসব দেখেই আমার শৈশব কেটেছে।

নানুভাই, এ চিঠিতে আমার গ্রামের বাড়ির যে বর্ননা দিলাম,  যে চিত্র আঁকার প্রয়াস তা তুমি কি কিছুটা বুঝতে পারছো ? আমাদের শৈশব এইসব নিঃসর্গ আর প্রতিবেশ নিয়েই রচিত। আজ যান্ত্রিক জগতের নানা আয়োজন, নানা বিনোদন উপকরণ, কিন্তু কোনো কিছুর সাথেই এই আনন্দের তুলনা হয় না। বাথটাবে তো আর পুষ্করিণীর মতো সাঁতার কাটা যায় না। এখনও যা কিছু আছে, কিছুটা ভগ্নদশা, তবু তোমাকে নিয়ে একবার নৈকাঠি যাবার ইচ্ছা আমার।

ইতি,

নানুভাই।


Sender:

Shahed Hossain

MA. in Sociology, Dhaka University

Age: 70

Occupation: Business

Place of origin: Greater Barisal

Information of Ancestors: Talukdar family

Location of the native house: Naikathi village, Keora union, Jhalakathi district, Barisal

Time of establishment: 1955-56

Time of demolition: 2007

Rural Homestead of Shahed Hossain
Rural Homestead of Shahed Hossain | Source: Shahed Hossain, Presentation by Saad Ben Mostafa
Illustration by Saad Ben Mostafa
Illustration by Saad Ben Mostafa

 

Courtesy: We are thankful to Architect Alia Shahed, daughter of  Shahed Hossain, for her collaboration.


আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।

বিস্তারিতঃ http://localhost/context/events/event/basatbari/

ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com


Disclaimer:

CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website.

 

PEOPLE ALSO VIEW