মূল চিঠি:
আমার আদরের দাদাই,
তোমাদের চিঠিটা যখন লিখছি তখন হয়তো পৃথিবীটা ঠিক আগের পৃথিবীটার মত নেই। চারপাশের পরিবেশটাও পালটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ছেলেবেলা গুলোও পালটে যাচ্ছে। তোমাদের ছোটবেলা আর আমাদের ছোটবেলায় যে দূরত্ব সেটা হয়তো তোমরা কখনও নিজের চোখে দেখতে পারবে না। তাই তোমাদের জন্য চিঠি লিখে যাচ্ছি। আমার ছোটবেলার গ্রামের বাড়ির কথা।
তোমরা গল্পে যে সবুজ গাছ পালায় ভরা গ্রামের বাড়ির কথা পড়েছো, ছোটবেলায় আমাদের গ্রামের বাড়িগুলো এমন ছিল। আমাদের বাড়ি ছিল চট্টগ্রামের রাউজান সুলতানপুর গ্রামের নন্দীপাড়ায় । আমাদের বড় পরিবারের বাবা কাকাদের একসাথে বাড়ি। বিশাল বড় জায়গা, চারপাশে বড় বড় গাছ। আম,কাঁঠাল, নারকেল, মেহগনি, সেগুন। গ্রামের বড় রাস্তা থেকে বাড়িতে ঢোকার রাস্তায় দুটো বড় পুকুর। পুকুরে নানা মাছ। সেটা পেরিয়ে বড় খোলা জায়গায় সারি সারি গাছ আর বাড়িতে ঢোকার আগে ছিল বড় একটা আম গাছ। প্রহরীর মত চারপাশে তার হাত ছড়িয়ে ছায়া দিয়ে রাখত৷ আম গাছ পেরিয়ে ঢুকতেই হাতের ডানদিকে ছিল আমার বাবার কাকুদের দোতলা মাটির বাড়ি। টিনের চালা দেয়া, সামনের দিকে খোলা বারান্দা দেয়া ৷ সেকালে যাদের বড় পরিবার ছিল তারা দোতলা মাটির ঘর বানাতো বড় করে। ওনাদের ও তাই ছিল। গ্রামের অন্য বাড়িদের মত। আর ঠিক বাঁ দিকে ছিল আমাদের একতলা মাটির ঘর ৷ টিনের চাল। দোতলা বাড়ির সামনেই ছিল আরেকটা মাটির একচালা ঘর ৷ আর আমাদের ঘরের সামনে ছিল ছোট বেড়ার ঘর। আগের দিনে আমার দিদুমণিরা সবাই ওই কুঁড়ে ঘরে রান্না করত ৷ আর দিন শেষে খালি উঠানে এসে সবাই বউরা মিলে পুঁথি পড়ত ৷ পুরো বাড়ির চারপাশে ছিল ছোট খালের মত করে কাটা। আমাদের ভাষায় ওটাকে আমরা বলতাম গড়াই। ভেঙে যদি বলো তাহলে গড় করা। তখনের দিনে গ্রামে সীমানা ভাগ করতে কেউ বেঁড়া, পাঁচিল দিত না ৷ সবাই গড়াই করে দিত। আর গড়াই এর দুপাশে গাছ লাগিয়ে দিত৷ এই ছিল জমি ভাগ করার উপায়।
ছোটবেলায় যখন বাড়িতে যেতাম তখন পুকুর পাড় থেকে বাড়িতে আসার পথে গাছে গাছে পাখিদের গান শুনতাম। সকালে সূর্যের আলো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে জানলা দিয়ে ঘরে এসে পরত ৷ বৃষ্টির দিনে পুকুরের পানি বেড়ে গিয়ে ডাঙ্গায় মাছ উঠে আসত। আর টিনের চালে বৃষ্টির আওয়াজ শুনতে পেতাম।রাতে মিট মিট করে হলুদ বাতি জ্বলত, আর চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, জোনাকি পোকা পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত, হাতের মুঠোই নিয়ে লুকোতাম । শীতের দিনে কুয়াশায় সব ঢেঁকে যেত, গ্রামের বুড়োরা পাড়ার চায়ের দোকানে বসে টেলিভিশন চালিয়ে আড্ডা জুড়ত। রাঙামাটি আমাদের গ্রাম থেকে বেশি দূরে ছিল না বলে হাটবারে পাহাড়ীরা আসত বাজার করতে। কিন্তু তোমরা কি সেসব দেখতে পাবে? হয়তো পাবে ৷ হয়তো না ৷ পৃথিবী পাল্টাচ্ছে, গ্রামগুলো শহরের মত যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। হয়তো গ্রামের মেঠোপথ পালটে পিচঢালা রাস্তা হবে, মাটির বদলে ইট, সিমেন্টের দালান। কিন্তু যেমনটা গ্রাম আমরা দেখেছি সে স্মৃতি কখনও পাল্টাবে না। গ্রাম —সেই সবুজ গাছপালা, পুকুরের স্বচ্ছ জল, সন্ধ্যায় পাখির ঘরে ফেরা, মন্দিরের ঘন্টার শব্দ, বৃষ্টির টাপুর টুপুর। সে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর দাদু। চিঠিতে যদি সেটার অনুভূতি পাও, তাই লিখে গেলাম।
ইতি,
তোমাদের দাদাই
অন্যান্য তথ্য
নাম – সুদীপ্ত নন্দী
পেশা– ছাত্র
(স্থাপত্য ও পরিকল্পনা বিভাগ )
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , চট্টগ্রাম
বয়স – ২১ বছর
স্থানীয় ঠিকানা – রাউজান সুলতানপুর নন্দীপাড়া
বর্তমান ঠিকানা – নন্দনকানন , চট্টগ্রাম
পূর্বপূরুষের তথ্য্ – এই বংশের পূর্বপুরুষেরা রাউজান সুলতানপুরের নন্দীপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করে । এই বংশের মুকুটরায় নন্দী মতান্তরে রায়মুকুট নন্দী মুসলমান শাসনামলে হিন্দু জমিদার ছিলেন । বসবাস শুরুর পূর্বে এখানে বসতবাড়ি তেমন ছিল না , গরু চরানোর ভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হতো । এই বংশটি বলা যায় বিশাল শাখাপ্রশাখায় বিভক্ত হয়ে গেছে , যার একটি ক্ষুদ্র শাখা অংশ মাত্র ।
পুরোনো অবস্থা – পূর্বে মাটির বাড়ি ৩টি বাড়ি ।( দুটি একতলা , ১টি দোতলা )
বর্তমান অবস্থা – বর্তমানে দোতলা বাড়িটি ভেঙ্গে গেছে । তার সামনের মাটির বাড়িটি ভগ্নপ্রায় , অন্য মাটির বাড়িটি কে টিনের বাড়ি করা হয়েছে , বসবাসের সুবিধার্থে । পরিবর্তনের আগে একতালা মাটির বাড়িতে বারান্দা ছিল যা বর্তমানে অনুপস্থিত। বাঁশ এর কুঁড়ে ঘর টিকে টিনের করা হয়েছে ।
English version | Translated by Labiba Nazeen
My dearest grandchild,
When I am writing you this letter, perhaps, the world will not be the same as before. With the constantly changing environment, childhoods have evolved as well. Undoubtedly, you will never be able to perceive the difference between our childhood with yours. Hence, I’m writing you a letter about my childhood village home.
Our village homes were like those you read about in stories, amidst green and full of trees. It was in Nandipara of Raozan Sultanpur village in Chittagong. In our big family, our father and uncles had a house together. Big trees like mango, jackfruit, coconut, mahogany and teak encircled vast spaces. On arrival to the house from the main road, were two big ponds, with a variety of fish. Beyond that, there was an open space with rows of trees and a large mango tree located at the entry to the house. The mango tree, like a guard, with its spreading canopy, provided shade to the surroundings. Upon crossing the tree, to the right was my father’s uncles’ two-storied mud house, tin-roofed with an open front facing verandah. At those times, only larger families built two-storied mud houses like this, identical to other village homes. On the left, was our one-storied, single tin-roofed mud house. Opposite the two-storied house was another single-roofed mud house. And situated in front of our house was a small fenced hut. Previously, my grandmothers used to cook in the small hut and, at day end, the women would gather in the yard to read books. Small canal-like channels bordered the whole household. It was locally known as gorai, meaning a moat. Back then, in villages, fences or walls were not used to divide the land. Rather, gorai was used with trees planted alongside them.
During childhood, while heading home, I listened to the singing of the birds in trees, all the way from the pondside to home. In the morning, sunlight gleamed past the window through the gaps of the tree leaves. On rainy days, the water of the pond rose and brought the fishes ashore. I could hear the sound of the raindrops on the tin roof. At night, yellow lights flickered, besieged by the sound of the crickets; the fireflies led the way as I tucked them in my fist. In winter, everything was cloaked in fog, and the elders of the village sat and chatted in the neighborhood tea shop with television turned on. Since Rangamati was not far from our village, people from there came to the market for shopping. But will you be able to see any of it? Maybe you will. Maybe not. As the world is reforming, villages are adopting the mechanical lifestyle like the cities. Probably, the pitch roads will replace paved ones, and brick-cement houses will take the place of mud houses. Nevertheless, the memories we have will never fade away – a village with green trees, clear water of ponds, homeward birds flying in the evening, sound of temple bells and drizzling rain. That was a beautiful world, grandchild; hope that you will feel it through this letter.
Yours truly,
Your Grandfather
Other Information
Name– Sudipta Nandi
Profession– Student
(Department of Architecture and Planning)
Chittagong University of Engineering and Technology, Chittagong
Age– 21 years
Local Address– Raozan Sultanpur Nandipara
Current Address– Nandankanan, Chittagong
Ancestor Information – The ancestors of this family started living in Nandipara village of Raozan Sultanpur. Mukutrai Nandi, from this family, was a Hindu zamindar during the reign of Raimukut Nandi Nusalman. Before colonization, not many houses were here and lands were mostly used for cattle grazing. This family is a small part of a lineage, that is said to be divided into extensive branches.
Old Condition– Former mud- house 3 houses (2 one-storied, 1 two-storied)
Current condition – The two-storied house has collapsed. The mud house in front of it is almost under ruins, the other mud house has been turned into a tin house for the convenience of living. Prior to the conversion, the one-story mud house had a veranda, which is missing at present. The bamboo hut has been converted to a tin house.
হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের শেকড়। গ্রামের বাড়ি আজ যেন এক নস্টালজিয়া। শুধু বেঁচে আছে আমাদের স্মৃতিতে। কি রেখে যাচ্ছি আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে? সেই শিকড়ের খোঁজে আমরা খোলা চিঠির আহ্বান জানিয়েছিলাম।
আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।
বিস্তারিতঃ http://localhost/context/events/event/basatbari/
ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com
Disclaimer:
CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website