মূল চিঠি:
প্রিয় দাদুভাই,
জানি হয়তো একদিন নিশ্চয়ই জানতে চাইবে আমাদের ছোটবেলার কথা। তাই তোমাকে এই চিঠিতে বলে রাখলাম। ভোরবেলা লাল সূর্যের কিরণ খেজুর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এসে পড়তো আমার মাথার উপর। আর আমি ঘুম থেকে উঠতাম। শালিক, ঘুঘু, চড়ুই ঘুরে বেড়াতে। বাড়ির সামনে দুই বাগানে কত রং বেরঙের প্রজাপতি দিবালোকের সূচনা কে স্বাগত জানাতো। এর মাঝেই ছিল মেইন গেট থেকে বাড়িতে আসার রাস্তা। দুপাশে কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়া দুটি বড় গাছ ছিল, তাই রাস্তাটা লাল-হলুদ ফুলে রাঙিয়ে থাকতো। দুটি বাগানে সারিবদ্ধ সুপারি গাছ ছিল। টগর, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, জবা, কাঠগোলাপ, দেবদারু, জবা, কাঞ্চনফুলও ছিল। বাড়ির পুবে ঘাসমাঠে মা মুরগিদের ছেড়ে দিত। ঘাসমাঠ ও বাড়ির মাঝে বেদানা গাছে বাবুই পাখির বাসা ছিল। সময়ের সাথে বেলা হলে জঙ্গল আর ঘরবাড়ির মাঝের মাটির রাস্তা ধরে স্কুলে যেতাম। আমার ঠাকুরদার স্কুল ছিল। তখন বন থেকে পাখিদের ডাক শুনতাম, গ্রীষ্মকালে ঝিঁঝিঁ পোকাদের আওয়াজে মেতে থাকত রাস্তাটা। সুন্দরবন হলেও বাঘ ছিল না, শিয়াল ছিল । তবে ছুটির দিনে দুপুরে বাড়ির পেছনে দুটি পুকুরের মাঝের পাড়ে গাছ তলায় বসে দেখতাম মাছেরা ভেসে উঠতো; কখনো সাপেদের দেখতাম এঁকেবেঁকে চলছে। মাঝেমধ্যে চারিদিকে নিস্তব্ধতা কাটাবার তরে জলে ঢিল মারতাম, আর তা সুন্দর আওয়াজ করে বৃত্ত তৈরি করত। দুই পুকুরের চারদিকে ঝাউ, খেজুর, নারিকেল, তাল, পেয়ারা, কলাগাছ, খিরিস, ইউক্যালিপটাস, আম, টক কুলের গাছও ছিল। নিম গাছের ডালে বসে মাছরাঙারা মাছ ধরতো। আমড়া গাছ থেকে আমড়া পারতাম। ঠাকুরমা টক-ঝাল-মিষ্টি সব রকমের আচার বানাতো, আমি সবই খেতাম। এইভাবে সময় গড়িয়ে বিকাল হলে আমরা ঘাসমাঠে খেলতে যেতাম। পাশে মুরগিরা ঘুরে বেড়াতো। মা কলস কাঁখে জল আনতো। বসন্তকালে রাধাচূড়া গাছে কোকিল বসে ডাকতো। খেজুর এর সময় খেজুর খেতাম। সন্ধ্যার আগমনে আমাদের মতো সবার ঘরে ঘরে হারিকেনের আলো জ্বলতো।
আমাদের খড়ের চাল, মাটির বাড়ি ছিল। একদিকে কাঠের ফ্রেম আর বাকি তিন দিকে মাটির দেয়াল ঘেরা বড় সদর ছিল। এর পেছনে দুই পাশে দুটো দুটো চারটে ঘর, মাঝের গলিটা সোজা পেছনে বড় ডাইনিং এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। ডাইনিং থেকে রান্নাঘরে সরাসরি যাওয়া যেত। সব জানালাগুলোতে খড়খড়ি ঝোলানো থাকতো। বাড়ির পেছনে তেতুল ও মিষ্টি কুলের গাছ ছিল; এবং পাকা শৌচালয় আর বাঁশ বাগানও ছিল। পড়তে বসলে হারিকেনের আলো দেখে এক দুটো ঘাসফড়িং জানালা দিয়ে এসে পড়ার টেবিলে উপস্থিত হতো। পড়ার ফাঁকে রান্নাঘরে মা কি রান্না করছে দেখতে যেতাম। রান্না শেষে রান্না ঘরের সামনে ফাঁকা জায়গায় জ্যোৎস্নারাতে শীতল পাটিতে বসে সবাই গল্প করতাম। রেডিওতে নাটক শুনতাম। জোনাকির সাথে চাঁদ আর উড়ো মেঘদের দেখতাম। হাওয়ায় সারিবদ্ধ সুপারি গাছ গুলোর পাতা নড়তো, আওআজ হতো। একান্নবর্তী পরিবার সর্বদা রমরমিয়ে থাকতো। বড় হওয়ার সাথে সাথে স্কুল পরিবর্তন হলো। হোস্টেলে থেকে পড়তাম।তারপর স্নাতকোত্তরের স্থাপত্যবিদ্যা পড়তে আরো দূরে শহরে গেলাম। হঠাৎ পরপর দুই বছর অবিবাহিত দুই কাকু মারা গেলেন, তবে ঠাকুরমা বেঁচে আছেন। জানিনা মানুষটা কেমনে নিজেকে সামলে ছিলেন সেই সময়। বাবা কাজের সূত্রে শহরে থাকতেন, তাই ওখানকার জায়গা জমি বিক্রি করে শহরে চলে আসি।
দাদুভাই, সে ছিল স্বাধীনতাপূর্ণ, এক প্রকৃতি-বান্ধব জীবন। আজ সবই স্মৃতি হয়ে আছে। তুমিও নিশ্চয়ই চাইবে এমন জীবন কাটাতে। নিশ্চয়ই চাইবে।
ইতি
তোমার দাদুভাই
নাম: কৌশিক জানা
পেশা: ছাত্র (স্নাতকোত্তর স্থাপত্যবিদ্যা)
বয়স: ২২
এলাকার নাম: মৌশুনী/ মৌসুনি, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ
পূর্বপুরুষদের তথ্য:
ঠাকুরদা-(মৃত) সীতারাম জানা (প্রধান শিক্ষক)
ঠাকুরমা- দীপিকা রানী জানা (গৃহবধূ)
বাবা- অশোক কুমার জানা (ব্যবসায়ী)
মা- সুবালা জানা (গৃহবধূ)
এথনিসিটি: ভারতীয়
বসতবাড়ি নির্মাণ কাল-২০০৪
বসতবাড়ি ধ্বংস কাল-২০১৮
English version | Translated by Amit Imtiaz
Dear Dadubhai (Grandson)
I know maybe one day you will want to know about our childhood so I telling you in this letter. I would wake up in the morning when the morning sun would fall on my face through the space between the palm leaves. Used to hear storks, doves, crows and sparrows roaming around. Many colorful butterflies welcomed the morning light in both the garden in front of the house. In between the garden, there was our main entrance, a narrow road from the gate leading to the house. There were these two trees of Royal poinciana and Peacock Flower on either side of the road, during the flowering season it became vibrant with red and yellow flowers. There were betel trees lined up in the two gardens, there were crepe jasmine, cape jasmine, tuberose, china rose, white frangipani, Ashoka trees, white Jaba, Kanchan flowers. My mother used to leave the chickens in the green plain field to the east of the house. In between that green field and the house, there was this pomegranate tree nested with birds. As the sun goes up, I would go to school along the muddy road between the forest and the house, my grandfather used to run that school. I could hear birds chirping from the forest while going to school, Oh and in summer the road was buzzing with the sound of crickets. Although it was a part of Sundarban, there were no tigers but foxes. But on holidays, at noon, I would sit under a tree in the middle of two ponds at the back of the house and watch fish, sometimes I would see snakes slithering. Sometimes I would throw stones in the water to break the silence around me and make circles with beautiful sounds. The two ponds were surrounded by palm, date, coconut, palm, guava, banana, lebbek tree, eucalyptus, mango and tamarind trees. kingfishers used to catch fish from the branches of neem trees. We used to pick hog plum from trees. Grandma used to make all kinds of pickles, I used to eat them all. As time went on, in the afternoon, we used to play on the field, chickens would roam around us, mother used to fetch water with a pitcher, in the spring we were entertained by the cuckoos. In the evening, every house lit up a kerosene lantern-like us. Our house was made of mud and the roof was made of straw. The house had a wooden frame on one side and the earthen wall on the other three sides, with a large front. It had a total of four rooms, two on either side, with a large passage connected directly to the large dining room at the back. We could go straight to the kitchen from the dining room. Every window has this screening we called ” Khor-Khori”. There were tamarind and sweet plum trees behind the house and there were pucca toilets and bamboo gardens as well. When we used to sit down to study, one or two grasshoppers would come to the reading table through the window seeing the light of the kerosene lantern. I used to peek through the kitchen to see what my mother was cooking. When the cooking ended, everyone would sit on the “Sitalpati” (a kind of mat which feels cold by nature) in the empty space in front of the kitchen under the moonlight and used to chitchat and tell stories, listen to dramas on the radio, see the moon with fireflies and the flying clouds; the leaves of the lined up betel trees used to flutter in the wind offering the auditory appeal of musical psithurism (the rustling sound of tree leaves). Our extended family always used to be in a state of euphoria. with time, I grew up, the school changed, I moved away from home and started staying in a hostel for further studies. Then I went to a faraway city to study architecture at the undergraduate level. Suddenly one of my two unmarried paternal uncles died, the other died the following year. But grandmother was alive. I don’t know how she managed herself at that crucial point of her life! At that time my father used to live in the city because of his job, so we sold the village plot and moved to the city. Dear Dadubhai (grandson), what an independent life it was in nature. Today everything has become a memory. Certainly, you would want to live a life like this. Definitely, you would!
Sincerely
your Dadubhai (Grandfather)
Sender: Koushik Jana
হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের শেকড়। গ্রামের বাড়ি আজ যেন এক নস্টালজিয়া। শুধু বেঁচে আছে আমাদের স্মৃতিতে। কি রেখে যাচ্ছি আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে? সেই শিকড়ের খোঁজে আমরা খোলা চিঠির আহ্বান জানিয়েছিলাম।
আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।
বিস্তারিতঃ http://localhost/context/events/event/basatbari/
ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com
Disclaimer:
CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website