COVID-19 কে মোকাবেলা করতে প্রবল চাপের মুখে পড়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। প্রায় 5.21 মিলিয়ন কেস বিশ্বব্যাপী যা বেড়েই চলেছে ( until 23 of May, 2020)। স্বাস্থ্যকর্মীরা আরও উদ্বিগ্ন এর দ্রুত সংক্রমণ নিয়ে যা কিনা ভয়ংকর সংকট তৈরি করছে চিকিৎসা সেবায়। ইতোমধ্যেই আমরা ইতালি, স্পেন, চীনের মতো অনেক দেশকেই দেখছি করিডোর, অস্থায়ী তাবু, এমনকি রাস্তায় শুধু চাদর বিছিয়ে দিতে; হাসপাতালগুলোর শয্যা পূর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। ডিজাইনার, স্টার্ট আপ থেকে শুরু করে বড় বড় ফ্যাশন হাউস, অ্যালকোহল ব্র্যান্ডসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের অনেকেই যথাসাধ্য সাহায্য করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে। ইটালিয়ান স্টার্ট আপ Isinnova ভেন্টিলেটরের জন্য 3D প্রিন্টেড ভালভ তৈরি করেছে, বিতরনের জন্য কার্বন নেগেটিভ হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছে নিউইয়র্কের স্টার্ট আপ Air Co., Kering (Gucci’র প্যারেন্ট কোম্পানি) অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি প্রস্তুত রেখেছে তাদের প্রোডাকশন লাইনকে যেকোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরির জন্য। তবে এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় চাওয়াটাই হলো হাসপাতালের শয্যা। বিশেষ করে ICU. কেননা যা আছে তা চাহিদার আশেপাশেই নেই। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ১০০০ মানুষের জন্য শয্যা ২.৮ টি, ভারতের মতো জনবহুল দেশ যার জনসংখ্যা প্রায় ১.৩ বিলিয়ন সেখানে ১০০০ জনের জন্য শয্যা ০.৫ টি। এই সময়ে আন্তর্জাতিক কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই যে একটি দেশে হাসপাতালে কতগুলো শয্যা প্রয়োজন। ইটালিতে ১০০০ জনের জন্য শয্যা ৩.২ টি যা যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের চেয়ে বেশি; এরপরও তারা পরে গেছে এমন এক বাস্তবতায় যেখানে শুধু তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে যাদের টিকে যাওয়ায় সম্ভাবনা তুলনামূলক ভাবে বেশি, কেননা অভাব আছে সরঞ্জামের। এই বীরেরা তাদের সাধ্যের মধ্যে করে যাচ্ছেন সবই। কিন্তু দ্রুত সংক্রমন ঠেকানোর তাদের এই প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে যাবে নিমেষেই যদি কিনা স্বাস্থ্যসম্মত নাহয় সেবার জায়গাটি। আর তাই কিনা ইটালিয়ান স্থপতি Carlo Ratti এবং Italo Rota বের করলেন সমাধান, যেখানে শিপিং কন্টেইনার গুলোই হবে ICU pod (1)।
এই ICU পডগুলিকে বলা হচ্ছে CURA (Connected Units for Respiratory Ailments). যা কিনা Cure এর ল্যাটিন প্রতিশব্দ! বিশেষ করে ইটালিতে হাসপাতাল গুলোর বাড়তি চাপ নেবে এগুলো। Ratti Studio, Carlo Ratti Associati এবং MIT Senseable City Lab এই CURA ইন্টেনসিভ কেয়ার পডগুলো দিয়ে তৈরি করছে “মোবাইল ফিল্ড হাসপাতাল”, যেগুলো একই সময়ে দু’জন রোগীর জন্য বায়োকন্টেইনমেন্ট ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। CURA দলটি মিলানে তাদের প্রথম প্রোটোটাইপ হাসপাতালটি তৈরি করে। “এর উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী শহরগুলোতে খুব দ্রুত এর স্থাপন যোগ্যতা যা ICU সংকটের একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করবে। এই ইউনিট গুলো তাবুর মতো খুব দ্রুতই সেট করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, নিশ্চিত করা যায় হাসপাতাল স্তরের স্বাস্থ্যবিধি যা তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার যোগ্য। পাশাপাশি এটি আরও নিশ্চয়তা দেয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষিত কর্ম পরিবেশের। CURA দলের একজন মুখপাত্র জানান, “বিশ্ববিস্তৃত এ মহামারী যে পর্যায়েই পৌছাক না কেনো, এটি ধরেই নেয়া যাচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রয়োজন হবে আরও ICU এর।”
CURA এর নকশার মূলনীতিঃ
শিপিং কনটেইনার দিয়ে তৈরির পড (pod) গুলো খুব দ্রুতই জুড়ে দেয়া বা আলাদা করে ফেলা যায়। জরুরি অবস্থায় শিপিং কনটেইনার দিয়ে তৈরি ICU সড়ক, রেল ও জলপথে খুব দ্রুতই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী স্থাপন করা যাবে। ৬.১ মিটার দীর্ঘ (প্রায় ৮’x৮’) কনটেইনার গুলোকে ইউনিট হিসেবে ধরে নকশা করা হয় যার ভেতরে নিন্মচাপ তৈরির জন্য কৃত্রিম বায়ু – চলাচলের ব্যবস্থার রয়েছে, সাথে সাথে যা কলুসিত বায়ু নির্গমন রোধ করে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে রোগ সংক্রামণ সম্ভাবনা হ্রাস পাবে, যারা সবচেয়ে ঝুকির সম্মুখীন হয় প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কারনে। এটি হাসপাতাল ও পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত প্রচলিত পদ্ধতি। স্থপতিরা CURA এর নকশায় বায়ুবাহিত সংক্রামক আইসোলেশন কক্ষের (AIIRs) মান বজায় রেখে পড গুলোর নকশা করেন। প্রতিটি ICU pod এ এক সাথে দু’জন করোনা ভাইরাস (COVID-19) আক্রান্ত রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে। CURA এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও কার্যকরী অংশটি হল এর একক(unit) বা কোঠা ভিত্তিক (modular) নকশা। প্রতিটি পড (pod) একা একা কিংবা একাধিক পড (pod) বেলুন সদৃশ কাঠামোর মাধ্যমে সংযুক্ত করে বৃহৎ নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। নকশা করার ক্ষেত্রে এটা পরিকল্পনায় ছিল যে, এগুলোকে হাসপাতাল অবকাঠামোর সম্প্রসারণ হিসেবে পার্কিং এলাকায় স্থাপন করা হবে। এমনকি প্রয়োজন সাপেক্ষে মাঠের মধ্যে বিন্যস্ত করে “মাঠ হাসপাতাল” গড়ে তোলা সম্ভব। “CURA এর লক্ষ্য অস্থায়ী বা জরুরি সমাধান হিসেবে মাঠ হাসপাতালের কার্যকারিতা উন্নত করা এবং পৃথিবীব্যাপি চলমান মহামারী মোকাবেলার উপযোগী করে তোলা”, ব্যাখ্যা করল সম্মুখ যুদ্ধে কঠোর পরিশ্রমে লিপ্ত দলটি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাঠ হাসপাতালঃ
বাংলাদেশ এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা COVID-19 এর মত প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুত তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল সংক্রামক নিয়ন্ত্রণে আমরা কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছি। জরুরি অবস্থায় হাসপাতালের ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা চাইলেই অস্থায়ী কাঠামোর মাধ্যমে হাসপাতালের ধারন ক্ষমতা বাড়াতে পারি কিংবা নতুন মাঠ হাসপাতাল স্থাপন করতে পারি। শিপিং কনটেইনার, রেলের বগি, তাবু, বাঁশ অথবা প্লাস্টিক কনটেইনারের তৈরি অস্থায়ী কাঠামোর মাধ্যমে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে পারি। যেমন রেল স্টেশনের পরিত্যাক্ত জমিতে রেলের বগি দিয়ে খুব সহজেই গড়ে তুলতে পারি অস্থায়ী হাসপাতাল। প্রাথমিক বিদ্যালয়,পার্ক কিংবা খেলার মাঠ গুলোতেও জরুরি হাসপাতাল স্থাপন সম্ভব।
ধরা যাক রেলের বগির কথা, রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ হিসেবে শুধু সহজলভ্যতাই নয়, রেল বগিগুলো গঠনগত কারনেও অত্যন্ত সুবিধাজনক। প্রায় ৭০০ বর্গফুটের একটি বগি অনায়াসে ৬ জনের জন্য একটি ICU unit হতে পারে যাতে থাকছে ২টি টয়লেট। প্রয়োজন অনুযায়ী এর ভেন্টিলেশনও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ডাবল ডোর এর গ্রহনযোগ্যতা বাড়ায় ICU unit বা Biosafety Level 3 Laboratory হিসেবে। সাথে নিয়ন্ত্রণযোগ্য জানালা, দরজা তো থাকছেই। পূর্ব হতেই বিদ্যমান বৈদ্যুতিক ও পানির সংযোগ কাজকে করে দেবে আরও সহজ। সব মিলিয়ে এটি নিঃসন্দেহে সহজলভ্য ব্যবহারযোগ্য একটি অপশন।
নিঃসন্দেহে পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীদের মত সাহসী আবদান না রাখতে পারলেও বিশ্বের প্রতিটি ব্যক্তিকে তার ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন- স্থপতি, প্রকৌশলী, সৃজনশীল পেশাদার, নির্মাতা, স্টার্ট আপ, ব্র্যান্ডস সবাই কে আহ্বান করা হচ্ছে মানবজাতির এই প্রয়োজনে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে যে কোন ধরণের সেবা দিয়ে সাহায্য করার জন্য। আর যদি আপনার উৎসর্গ করার কিছু নাও থাকে তারপরও আপনি সমান ও শক্তিশালি ভূমিকা রাখতে পারেন সংক্রামক মহামারীর ক্রমবর্ধমান দাপট থামিয়ে দিতে এবং আপনি তা পারেন খুব সহজেই ঘরে বসে থেকে, ব্যাক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে।
Reference:
1.Shipping containers repurposed into portable ICUs to help health professionals fight Covid-19
About the Author: Abdus Satter Tuhin, Nuuhash Akando and Amlan Kumar Dey are the students of Architecture at Shahjalal University of Science and Technology (SUST), Sylhet, Bangladesh.
Context contributor: Mohaimin Ali Khan, student, Dept. of Architecture, SUST.