মূল চিঠি:

স্নেহের ভবিষ্যত আমার,

আজ তোমাকে শোনাব এক রুপকথার গল্প! হ্যা, রুপকথাই বলা যায়, কারণ তোমার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার পরিবেশ হয়ত ইট-কঙ্ক্রিটের চার দেয়ালে বন্দি। কিন্তু তুমি শুনলে অবাক হবে, তোমার নানাভাই দের বেড়ে ওঠা খুবই অসাধারণ ছিল! ১২ বোন আর ১১ ভাই এর বিশাল জমিদারবাড়ি! তোমার নানার বাবা, মানে আমার দাদাভাই চেয়ারম্যান নবাব মিয়া চৌধুরির হাতে গোড়াপত্তন এই বাড়ির , সে ১৯৩০ সালের কথা!

আর্ট ডেকো স্টাইলে গড়ে ওঠা পুরো বাড়িটি ছিল মাটির তৈরি! চৌচালা টিনের ছাদে বৃষ্টির শব্দ কত সুন্দর হয় তোমরা কি জানবে কখনো তা? কিংবা পুকুরে কলাগাছের ভেলা ভাসিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ভেসে থাকা? তোমার নানাভাই খুব দস্যি ছিল, তার কিছুটা বুঝতে আমিও চেয়েছিলাম উঠানের লিচু গাছ থেকে লিচু চুরি করতে, তা না পেরে শেষে শসাই খেয়েছিলাম একবার ক্ষেতে দাঁড়িয়ে! ছোট্ট টিলা থেকে গড়িয়ে পরে ঘাসে উপুড় হয়ে আমবাগানের পাতার ফাঁকে নীল আকাশ ও দেখা হয়েছিল কয়েকবার, সেই টিলা অবশ্য এখন আর নেই!

আমার দাদার আমলে কোনো কিছুই টাকা দিয়ে কেনা লাগতোনা! কিছু ছিল, নিজেদের , আর বাকিটা বিনিময় প্রথা। ধানের বদলে কেউ মুড়ি দিত, গরুর দুধের বদলে দিত ঘানি ভাঙ্গা তেল!

ধানের বিস্তৃত মাঠ পেরিয়ে বিশাল ফটক বাড়ির। সীমানার একেবারে শেষ প্রান্তে ছিল আমাদের বাড়ি! তবে বলতে গেলে, পুরোটাই আমাদের বাড়ি! প্রতিবেশির বাড়ির পাশে কোনো সীমানা থাকত না! আমাদের দাদুবাড়ি তে প্রবেশ ছিল কাচারি ঘর (যেটা মূলত আমার দাদাভাই এর মিটিং এবং কাজের ঘর ছিল) এবং ধানের গোলার মাঝ দিয়ে কাঠাল গাছের ছায়ার নিচে। ছায়া পেরিয়ে বিশাল উঠান, চারপাশে লাকড়ি, গবাদী পশুপাখি আর মাঝে দিনে ধান শুকানো হত, রাতে বসত গানের আসর! পুরো ঘরটি সমান ২ ভাগে ভাগ করা ছিল ২ দাদীর জন্য!বসার ঘরের ২ পাশে পড়ার ঘর, এরপর বাচ্চাদের ঘর এবং শেষে শোবার ঘর এবং প্রস্তুত কক্ষ। ছোট উঠান পেরিয়ে বেড়ার দেয়ালের রান্নাঘরটিতে সারাক্ষণ চলত আলো-আধারির খেলা, পেছনের পুকুরের পানিতে সূর্যের আলোর প্রতিফলন হত বেড়ার ফাকে, সেই আলো এসে পড়ত চাঙ্গে ( বিশেষভাবে তৈরি বাশের খোপ,যেখানে মাটির হাড়ি রাখা হত) একপাশে ঢেকিতে ধান ভাঙ্গার শব্দ শুনে শীতের রাতে খেতাম নানা রকমের পিঠা! সবচেয়ে ভয় হত পুকুর পেরিয়ে টয়লেটে যেতে! আশেপাশের বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে থাকা জ্বিনের গল্প শোনার পর তো সারা রাত ভয়ে প্রাকৃতিক ডাক কেও সরিয়ে রাখতাম! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, মাটির পুরো দেয়ালের কারণে এই ঘর গ্রীষ্মে শীতলতা আর শীতে দিত উষ্ণতা !

ইদানিং সব বদলে গেছে, মাটির বাড়ির অর্ধেক এখন টাইলস দিয়ে মোড়ানো । পুকুর ঘাট আর উঠানেও পিকনিক হয়না বহুদিন। কানে শুধু বাজে সেই গান, “কেরে তুই সব দৈত্য দানব, সব যে কেড়ে নিলি?” শুধু রয়ে গেছে হাসান চৌধুরী বাড়ির জৌলুসের স্মৃতি!

ইতি,
তোমার প্রাক্তন

প্রেরক:  সাজিয়া নিহা

বাড়ির অবস্থান: হাসানখিল, ডাবুয়া, রাউজান, চট্টগ্রাম

English Version

Dear Progeny,

Today I am going to tell you a fairytale. Yes, it can be considered as a fairytale as you are being brought up within the cage of concrete. But you would be surprised to hear that the era in which your grandfather were brought up was extraordinary. A humongous Jamindar bungalow with 12 sisters and 11 brothers! My grandfather Chairman Nawab Miah Chowdhury founded this house in 1930.

This art deco style building was made of earth. Will you ever know how melody of rain hitting on a tinshade roof feels? Or floating on a raft made of banana log in the pond as long as heart wants? Your grandfather was very mischiviuos. I wanted to emulate him by stealing lychee from our premises but failed miserably. Watched the azure sky through the canopy of mango trees after rolling from a small hill numerous times; however, that hill is not there anymore.

In my grandfather’s era, money was not used as a medium of exchange, rather they exchanged goods.

The enormous entrance of the house was at the end of a vast rice filed and the house was at the end of the border. But you can say that the whole area was home to us. No fences were there to create division between neighbors. At the entrance of the home there was an office (used for meeting and other official purpose) and a granary. After that a spacious courtyard wherein, at daytime cattle, burning woods occupied the space but at night, the place was lit by the sound of music. The whole house was divided into two equal parts for my two grandmothers. Two reading rooms on either side of the drawing room then children’s room and bedrooms. The kitchen came afterwards and it was sandwiched between a small yard and a pond. The kitchen always witnessed the game of hide and seek between sunlight and shadow. Lights reflected from the pond to the fence wall of the kitchen. We used to devour pithas in winter while listening to the thud of dheki. The most frightening thing was when we had to go to the toilet. The bamboo bushes surrounding the toilet was said to be the hotbed of jinns. We used to hold our bowel movements after hearing their stories at night.

Everything is changed now, tiles replaced half of the earth wall. Picnic on the yard beside the pond has become a distant memory. Time has taken everything but only the radiance memories of Hasan Chowdhury Bari.

Yours

Ancestor.

Sender: Sajia Niha

Location: Hasankhil (named after the father of my grandfather Hasan Chowdhury), Dabua, Raozan, Chittagong
Re-construction date: 2017

Notes from the sender: My grandfather was a chairman in the reign of Pakistan and this house was a shelter for the Hindus of the village in the war of 1971. Later he was bombed by the Rajakars of our village for giving shelter to the fighters and non-Muslims! He was attacked at our “kachari ghor” while attending a meeting and 2 persons were killed right at the moment leaving my grandfather paralyzed for the rest of his life!

হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। জীবন ও জীবিকার সংগ্রামে আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের শেকড়। গ্রামের বাড়ি আজ যেন এক নস্টালজিয়া। শুধু বেঁচে আছে আমাদের স্মৃতিতে। কি রেখে যাচ্ছি আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে? সেই শিকড়ের খোঁজে আমরা খোলা চিঠির আহ্বান জানিয়েছিলাম।

আপনি যদি অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে থাকেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠিটি প্রেরণ করুন।

বিস্তারিতঃ https://contextbd.com/events/event/basatbari/

ইমেইল: boshotbari.context@gmail.com; context.editor4@gmail.com

Disclaimer:

CONTEXT (www.contextbd.com) and their collaborators jointly hold the copyrights of all contents including, but not limited to, all text, information, illustrations, images. You may not duplicate or reproduce any of the content on this website, including files downloadable from this website.